Sunday, December 21, 2014

কল্প-গল্পঃ ট্র্যাপড ইন দ্যা কোড



ইমন রায়হান ইউনিভার্সিটির পার্ট চুকিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটা ডেভেলপার কোম্পানিতে ইন্টার্ন হিসেবে যুক্ত হয়, পরে মাস কয়েক বাদে নিয়মিত প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। কোম্পানিটি একটি প্রতিষ্ঠিত গেম মেকিং কোম্পানি। ইতোমধ্যে তাদের নিজস্ব কনসোল এর কয়েকটি ভার্সন বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এইবার আরও আকর্ষণীয় ফিচার সমৃদ্ধ এবং আরও বাস্তবিক অনুভূতি দেবার লক্ষ্য নিয়ে নতুন কনসোল এবং গেম ডেভেলপের জন্যে সিদ্ধান্ত নেয়। ইমন সেই ডেভেলপার গ্রুপের একজন। তার কাজ ছিল প্রোফাইলিং তৈরি করা। গেমের বিভিন্ন প্রোফাইল এবং তাদের ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা তৈরি করাই ছিল আসল কাজ। কাজটা খুব সহজ মনে হলেও এতটা সহজ নয়। প্রতিটা ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিটা চরিত্রকে তার নিজস্ব ক্ষমতা, চাল চলন, আচার-ভঙ্গিমা, আর্টিফিশিয়াল বুদ্ধিমত্তা আর এর সবকিছুর উপর সীমাবদ্ধতা দিতে হবে। কোনটা যেন আবার কোনটার থেকে পিছিয়ে না থাকে কিংবা একই ধরনের কয়েকটা ক্যারেকটারের মধ্যে যাতে ভিন্নতা থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয় প্রতিনিয়ত।

মোটামুটি কাজ ভালোই চলছিল। কাজের ফাঁকে গ্রুপ মিলে জম্পেশ আড্ডা, শিডিউল ছাড়াই হুট করে সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া, পিকনিক-পার্টি এই সবই নিয়মিত চলছিল। এরই মাঝে ঘনিষ্ঠতা হয় গেম ইঞ্জিন ডেভেলপার ইরণের সাথে। ইরন বয়সে ইমন থেকে কিছুটা জুনিয়র হলেও কাজে এবং দুষ্টামিতে খুবই পটু কিন্তু একটু চাপা স্বভাবের। এই কারণেই ইরনের বিশেষ কোন বন্ধু নেই। তার সাথে যারা কাজ করে তারাও পারতপক্ষে ইরনকে এড়িয়ে চলে। প্রায় পার্টিতে কিংবা পিকনিকে ইরণ এক কোনায় চুপটি মেরে বসে থাকে, বাকি সবাই অন্যদিকে যার যার মত আনন্দে ব্যস্ত। ব্যাপারটা প্রথম কয়েকদিন নজরে না আসলেও পরে বেশ ভালোভাবেই নজরে পড়ে ইমনের। সরাসরি কিছু না বলে একটু খোঁজ খবর  নিয়ে তারপর একদিন এক পিকনিকে তার সাথে গিয়ে বসে কিছু সময় কাটায়, হালকা টুকিটাকি কিছু কথাও হয়। এইভাবেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু হয়। এরপর কাজের সময়টা বাদ দিয়ে প্রায় সবসময়ই একত্রে দেখা যায় তাদের। কাজ এবং থাকার সুবিধার জন্যে দু'জনে মিলে একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া নেয় অল্প কিছুদিন পরে।

শুধু বাইরের আলাপ আলোচনাই নয় কাজের অনেক আলাপও চলতো সমান তালে। কিভাবে এবারের গেম ইঞ্জিনটা ডেভেলপ করা হচ্ছে আর কোন কোন নতুন পর্যায়ে এইটাকে ব্যবহার করা সম্ভব আর প্লেয়ার গুলির প্রোফাইলিং এই ইঞ্জিনের সাথে কতটুকু যায় কিংবা আরও কত বিস্তৃত করা যায় এই নিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা চলতো। এবং আলোচনা থেকে বেশ অনেক জিনিস উঠে এসেছিল তাদের কাজে। ফলাফল, শেষ কাজটা আগের সবগুলি কাজের থেকেও বেশি সুনাম অর্জন করে এবং আর্থিক ভাবে কোম্পানি তাদের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩ গুন লাভ করে। যদিও এটা তাদের একার সফলতা নয়, তারপরও সবাই বুঝতে পারে এই একত্রে কাজ করার ফলাফল স্বরূপ তাদের এই প্রাপ্তি।

এর পরের প্রজেক্টে নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে পদন্নোতি দেয়া হয়। এবার দায়িত্বের সাথে সাথে স্বাধীনতাটাও অনেক বেশি চলে আসে তাদের হাতে। নিজেদের মত রুলস তৈরি করা আর গেমিং ইঞ্জিনকে সেই রুলস অনুসারে ডেভেলপ করা তাদের নেশায় পরিণত হয়। সমান তালে কাজ এবং নেশা মিটিয়ে চলছিল তারা। পরপর কয়েকটা কনসোল ভার্সন এবং গেইম তাদের দ্বারা তৈরি হয় আর কোম্পানি তাতে সুনাম এবং ব্যবসায়িক ভাবে ঈর্ষনীয় অবস্থানে উঠে আসে। ধাপে ধাপে আরও বড় হয় তাদের কাজে পরিসর।

একদিন কথায় কথায় ইরণ জানায় সে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের একটা গেমিং ইঞ্জিন তৈরি করতে চায়। এমন একটা ইঞ্জিন যাকে আসলে এইসব রুলস দিয়ে ঘিরে রাখা সম্ভব নয়। ইমন পুরোপুরি তখনও তার কথাটা বুঝতে পারে নি। হয়তো নতুন প্লান মনে করে শুনছিল কেবল। কিন্তু কদিন বাদে যখন সত্যি সত্যি তাকে নতুন প্রোজেক্টের জন্যে ক্যারেক্টার তৈরির অনুরোধ করে বসে ইরণ তখন বুঝতে পারে সে আসলে হেলাফেলা করছিল না, হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিরিয়াস ছিল ঐ ব্যাপারে। এইবার ইমন ইরণের কাছে ডিটেইলস জানতে চাইলো, বোঝার চেষ্টা করলো ঠিক ধরণের ইঞ্জিন সে তৈরি করতে যাচ্ছে। উত্তরে ইরণ যা বলল তাতে অন্য কেউ হরে স্রেফ তাকে 'পাগল' বলে আখ্যা দিতো। 

এটাও কি সম্ভব! শতভাগ রিয়েলিটির মত একটা ইঞ্জিন তৈরি করা কি আদৌ কোন প্রোগামিং এর কাজ?!? কিন্তু কোন কথাই শুনতে রাজী নয় ইরণ। তার কথা আমাদের স্পেস যেমন সকল ফিজিক্সের সূত্র আর কেমিস্ট্রির বিক্রিয়ার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে ঠিক একই রকম ভাবে এই ধরাবাঁধা সূত্রগুলি বসিয়ে এবারের ইঞ্জিন তৈরি করে চায় সে। আর যেহেতু ইঞ্জিনটা তাদের ক্লাউড স্টেশনে থাকবে তাই প্লেয়ার নিজের মতন নিজেকে প্রোফাইলিং করে তারপর এই ইঞ্জিনে অংশগ্রহণ করবে।

ইমন এইবার আসলে একটু বেশি পরিমাণে ধাক্কা খেল। সাধারণত যারা গেম খেলে তারা সবাই আক্রমণাত্মক ভাব নিয়েই তাদের প্রোফাইলিং করে, কিংবা বেশ ক্ষেত্রের প্রয়োজনে বেশ পারদর্শী চরিত্র নিয়েই সবাই খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যদি একটা পৃথিবীর সবাই পারফেক্ট এবং একই মানের একই কাজের উপযুক্ত হয় সেখানে পুরো বিষয়টার কোন পয়েন্ট থাকে না। ব্যাপারটা ইরণকে বলতেই সে হেসে উঠলো। উত্তরে বলল- 
- তুমি এখনো আমার প্লানটা বুঝতে পারো নি ইমন। আমি একটা নতুন পৃথিবীর কথা বলছি। পৃথিবী, যেখানে শুরু থেকেই নিজের পছন্দমত প্রোফাইলিং করা যাবে কিন্তু সে শুরুতেই সব পেয়ে যাবে না। ধীরে ধীরে তাকে সব দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাদের গল্পের শুরুটাও আমাদের মতই হবে। ধীরে ধীরে নিজেদের ম্যানুপুলেশন করে তাদের সংখ্যা বাড়বে। চাইলেই হাজার হাজার গেমার হুট করে এন্ট্রি নিতে পারবে না। তাদের অপেক্ষা করতে হবে এই গেমসটাতে অংশগ্রহণ করার জন্যে।

পুরো আকাশটা ভেঙ্গে পড়লেও ইমনের কাছে এই মুহূর্তে সেটা বিস্ময়ের কারণ হতো না যতটা না এখন এই মুহূর্তে হচ্ছে। নিশ্চিত ইরণ পাগল হয়ে গেছে, নয়তো সে তার সাধারণ চিন্তাশক্তি হারিয়েছে। ইমন তাকে এই কথাটাই সরাসরি বলল। কিন্তু কথা শুনে ইরণ ক্ষেপে গেলো না, দমেও গেলো না। সে শুধু বলল, সে তার মত কাজ শুরু করে দিয়েছে যদি তাকে বন্ধু হিসেবে সহায়তা করতে চায় তো ভালো। না হয় নিজেই পুরোটা গুছিয়ে নিবে।

হাজার উদ্ভট হোক, বন্ধুকে তো আর মানা করতে পারে না। আর এতদিন ধরে যেই চমৎকার কাজ গুলি তারা করে এসেছে তার বিপরীতে এখন তো কোনভাবেই পিছপা হওয়া সম্ভব না। তাই শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছার ইচ্ছাতেই কাজে নেমে পড়ল ইমন। শুরুতে বেশ ঝামেলা মনে হলেও আসলে কাজটা ততটা ঝামেলার নয়, সেটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারলো। যখন মোটামুটি একটা পর্যায়ে নিয়েই এসে পড়েছিল তখন আসল বোমটা ফাটাল ইরণ। বিশাল এক পরিবর্তন করতে হবে প্রোফাইলিং এ। ব্যবহারকারী কেবল ইচ্ছে করলেই সব ধরণের বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারবে না, তাদেরও বাস্তবতার মত পরিবার থেকে কিছু প্রোফাইল নিয়ে আসতে হবে কিংবা পারিবারিক কমন কিছু বৈশিষ্ট্য এমনিতেই যুক্ত হবে নতুন প্রোফাইল গুলিতে। আর অবশ্যই তাদের পরিবার হিসেবে কিংবা পরিবারের সদস্য হিসেবে এই গেমটাতে আসতে হবে। নয়তো হুট করে প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরের মত তারাও এন্ট্রি পাবে না এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায়।

এবার আর মেজাজ ধরে রাখতে পারল না ইমন, ইচ্ছা মত ঝাড়ল ইরণকে। এটাই যদি করার হতো তাহলে কাজ গুছিয়ে আনার আগেও বলা সম্ভব ছিল। কিন্তু তখন ইরণ টু শব্দটাও করেনি, আর যখন করছে তখন ইমনের কাজের প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন। এখন তার এই নতুন শর্ত প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে আবার গোঁড়া থেকে সব সাজাতে হবে। একরকম ঝগড়া-বাগড়া করেই বেরিয়ে এলো। ওদিকে প্রায় বছর কয়েক দেশে যাওয়া হয়না ইমনের। এইটা বাদে মেজর কোন কাজও নেই। রিফ্রেশমেন্টের জন্যে দেশে যাবার প্লান করলো সে। মনে মনে ভাবল তাকে ছাড়া যখন পুরো প্রজেক্টের কাজ ইরণের করতে হবে তখন সে নিশ্চই বুঝতে পারবে কত বড় পাগলামো করছিল সে। মনে মনে আরও আশা করল যে, দেশে থেকে ঘুরে এসে দেখবে এইসব পাগলামি ঝেড়ে বাদ দিয়ে নতুন কনসোল ডেভেলপ করার প্লানিং করছে ইরণ। যদিও খুব ভালো করে জানে এইসব কিছুই করবে না এই চুপচাপ থাকা উদ্ভট ছেলেটা। উল্টো হয় তাকে ফোন করে করে, কনফারেন্স আর লাইভ ভিডিও চ্যাট করে জ্বালাবে নয়তো আরও জটিল কিছু পাকাবে এই ক'দিনে। তবুও ইমন আর অপেক্ষা করল না, ২ দিন বাদেই দেশে যাবার টিকিট কনফার্ম করে প্লেনে চড়ে বসল।

দেশে ফিরার সপ্তাহ ২ পরও যখন ইরণ তাকে নক করলো না তখন মোটামুটি নিশ্চিত হল যে ইরণ এই প্রোজেক্ট বাদ দিয়েছে, আর চাপা স্বভাবের কারণে এটা স্বীকার করছে না। তাই ২ সপ্তাহ পর ইমনই তাকে ফোন দিল। ইরণ  ফোন রিসিভ করলো ঠিকই কিন্তু তাকে যেন ঠিক চিনতে পারলো না। বেশ কয়েকবার করে নাম বলার পর ইরণের মনে পড়ল কে এই ইমন। ব্যাপারটা ইমনকে কষ্ট দিলেও ইরণের খামখেয়ালিপনার জন্যে মনে রাখল না। খোজ খবর নেবার এক পর্যায়ে ইমনই জানতে চাইলো তার প্রজেক্ট সম্বন্ধে। ইরণ কিছু একটা লুকানোর মত করে বলল, "এখনো চেষ্টা করছি। তবে ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না।" শেষ লাইনটায় ইরণের হতাশা আর অনিশ্চয়তা কিছুটা ধরা পড়ল। তারপর সংক্ষিপ্ত কথা শেষ করে ইরণকে নিজের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন রাখল ইমন।

দেশে এসে প্রায় অনেকটা সময় নষ্ট করল। তবে এটাকে ঠিক নষ্ট বলা যাবে না, পরিবার থেকে এতদিন দূরে থাকার পর এই সময়টুকুও অল্পই মনে হয়েছে তার নিজের। সবাই মিলে এইখানে ঐখানে ঘুরাঘুরি, আত্মীয়দের বাসায় গিয়ে দেখা করে আসা, বেশ কিছু পর্যটন স্থানে পরিবার সহ ঘুরে আসার মত আরও অনেক কাজে দেখতে দেখতে সময়টা ফুরিয়ে এলো। ওদিকে নতুন কনসোল সম্বন্ধে ব্রিফিং করার সময় এগিয়ে এসেছে, তাই চাইলেও আর থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। চলেই আসতে হল অবশেষে। কিন্তু এসেই এত বড় শকড হবে তার ধারণা মাত্র ছিল না।

ইরণ একজন কলিগকে খুন করে তারপর আত্মহত্যা করেছে!!! 

এটাও কি সম্ভব! সে কারও সাথে মিশত না, তেমন কারও সাথে যোগাযোগও নেই তার তাহলে হুট করেই কিভাবে সে এই কাজ করতে পারে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, ইরণ কখনোই এমন আক্রমণাত্মক ছিল না। মারামারি, খুন, রাহাজানি এইসব খবর পর্যন্ত এড়িয়ে চলত। তাহলে এইটা কি করে সম্ভব হয়‍!!! 

এর উত্তর অজানাই থেকে যায়। ফরেনসিক এবং পুলিশ বিভাগ তেমন কোন তথ্য কিংবা মোটিভেশন এর পেছনে দিতে পারে নি। শুধু জানিয়েছে দিন কয়েক ইমি নামের মেয়েটার সাথে দেখা গেছে তাকে। তারপর কোন কারণে তাদের সেই ভাড়া নেয়া ফ্লাটে দুজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। "ইরিনা ইমি" বেশ বড় ধরণের ইলেকট্রিক শক পাওয়ার কারণে মারা যায়। ঠিক একই পরিমাণ শক ইরণও গ্রহণ করে বলে রিপোর্টে ধরা পড়ে। কিন্তু তারপরও মারা যায় নি। বরঞ্চ তার থেকে আরও ২ দিন পর সিলিং এ ঝুলে আত্মহত্যা করে।

কোন কারণ নেই, তারপরও ইমন নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে এই ঘটনার জন্যে। সে ঐ সময়টাতে দেশে না গেলে, ইরণের ঐ উদ্ভট প্রজেক্টের সাথে থাকলে হয়তো এই সব কিছুই হতো না। কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তেমন কিছুই আর করার নেই। কোম্পানির কাজের মধ্যে নিজেকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিলো। কিন্তু ধারাবাহিক ফলাফলের মত এইবারের কনসোল তেমন আকর্ষণীয় হল না। ব্যবসায়িক ভাবে তেমন ক্ষতি না হলেও প্রকৃত অর্থে যেই পরিমাণ লাভ আশা করেছিল তার ধারের কাছেও এবার যেতে পারেনি।

এরপর নিজেকে বেশ গুটিয়ে নিয়ে আসে ইমন। কাজে ইস্তফা দিয়ে নিজের এপার্টমেন্টেই শুধু সময় কাটাতে লাগল। সে ইরণের কাজগুলিকে দেখতে শুরু করলো। একেবারে শুরু থেকে প্রজেক্টের কাজ দেখে যেতে লাগল। আগে তেমন খেয়াল না করলেও পরে খেয়াল করলো ইরণ তার প্রোজেক্ট বন্ধ করেনি। তাদের নিজস্ব ক্লাউড কম্পিউটিং এ ফাইল গুলি এখনো সচল। শুধু সচলই নয় কিছু একটা আলাদা প্যাটার্ন নিজেই নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু ঠিক কি এইভাবে নিজেকে বার বার সামনে নিয়ে আসছে, কেনই বা প্রায়োরিটি বার বার পরিবর্তন হচ্ছে তার সঠিক কোন ফ্লো সে দেখতে পারছে না।

সপ্তা কয়েক বাদে জিনিসটা নজরে আসে ইমনের। তার প্রোফাইলিং সিস্টেম এখানে এড করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেখানে অনেক বড় ধরনের একটা পরিবর্তন আছে। আর পরিবর্তন টুকু করেছে ইমি নামের মেয়েটি, যে কিনা তার দলেই প্রোফাইলিং এর কাজ করত। এবার ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় ইমনের কাছে। ইরণ আসলে প্রোজেক্ট কখনোই বাদ দেয়নি। সেদিনের সেই হতাশাটা কৃত্রিম ছিল, কারণ তার কাজ সে এরই মাঝে অন্য একজনকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আর যাকে বুঝিয়েছে সেই মেয়েটার অবস্থান ঠিক তার পরেই ঐ কোম্পানিতে। নতুন করে মেয়েটা এক ধরণের প্রোফাইলিং করেছে, যেটাকে আধুনিক পরিবার এবং আধুনিক প্রসূতি ব্যবস্থা হিসেবেই চিহ্নিত করা যায় খুব সহজেই। এখানেও মানুষের মৌলিক চাহিদা এবং ধারণার মত দুজন প্যারেন্ট প্রোফাইল থেকে একজন চাইল্ড প্রোফাইল তৈরি হবে। আর সেই চাইল্ড প্রোফাইল একই সাথে দুই প্যারেন্ট প্রোফাইল থেকে যেমন বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে, ঠিক তেমনি ইউজারের চাহিদা মত বৈশিষ্ট্য যুক্ত হতে থাকবে সাথে সাথে। 

বলা যায় একটা সম্পূর্ণ পৃথিবী তৈরি করে ফেলেছিল ইরণ। এবার শুধু একে লাইভ ইভেন্ট আকারে কিছু ঘটনা কিংবা স্ক্রিপ্টের ভেতর দিয়ে চালিয়ে দেখার বাকি। যখন ইমন এই সব কাজ দেখে উত্তেজনায় কাঁপছিল ঠিক তখনই ভিজুয়াল ইমেজে ইরণের উপস্থিতি হয় ঘরটার মধ্যে। এটা একটা ত্রিমাত্রিক ব্যবস্থা যা তারা কনফারেন্স করার সময় ব্যবহার করতো। যদিও অফিসিয়াল সুবিধার মধ্যে এটা একটা, তবুও ব্যক্তিগত ব্যবহারের অনুমতি কেবল ইমন আর ইরণ পেয়েছিল সি.ই.ও'র পরে।

ত্রিমাত্রিক ইরণ বলতে থাকলো-

ইমন আমি দুঃখিত। কারণ আমি তোমার অনুমতি ছাড়াই তোমার কাজটি ইমিকে দিয়ে দিয়েছি। এবং যখন তুমি এই মেসেজটি দেখছ, তখন আমি আর সরাসরি তোমার কাছে ক্ষমা চাইবার অবস্থায় নেই।

ইমন আমি জানতাম তুমি এই পর্যন্ত এসে একে লাইভ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু ভুলেও এই কাজটি করতে যাবে না। কারণ ইতোমধ্যে আমি একটা সিম্যুলেশন চালিয়েছি। তুমি আমার এই থ্রিডির ঠিক নিচের ফ্লোরের কার্পেট এবং টাইলস সরালেই সেটির পরিণাম দেখতে পাবে। 

তুমি শুরু থেকেই বলে আসছিলে এটা অত্যন্ত উদ্ভট একটা প্রজেক্ট। এবং অনেক ভাবেই আমাকে নিরুৎসাহিত করেছিলে। কিন্তু আমি তখন একটা মোহে আটকে গিয়েছিলাম। বলতে পারও এটা আমার ছোটবেলার স্বপ্নের একটা অংশ বিশেষ। যখন আমি আমার বাবা-মা'কে একসাথে একটা এক্সিডেন্টের মধ্যে হারিয়ে ফেলি ঠিক তখনই এই ইচ্ছাটা আমার মনে আসে। যেখানে আমরা প্রাকৃতিক নিয়মে বড় তো হবো ঠিকই, কিন্তু অসময়ে কেউ হারিয়ে যাবো না। 

কিন্তু আমার ধারণায় এটা কখনোই আসে নি যে প্রকৃতিকে আর যাই হোক হাজার কোটি লজিকে একে মোড়ানো সম্ভব না। আমি যেহেতু এটাকে লাইভ সিম্যুলেশন করতে চেয়েছিলাম তাই সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন সিগন্যাল এবং তাতে সংরক্ষিত তথ্য চাচ্ছিলাম। আমি চাইছিলাম ইমি আমাকে সহায়তা করবে এই কাজে। সব ঠিক ঠাক চললেও ইমি তার মস্তিষ্ক এবং নিউরন শেয়ার করতে রাজী হচ্ছিল না। শেষে একরকম মরিয়া হয়েই তার ইচ্ছার বিপরীতে আমি তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করি। তার প্রতিটা সিগনাল আমি ক্যাচ করতে সক্ষম হই ৩ দিন সময় ব্যয় করে। একই সাথে নিজের মস্তিষ্কের স্ক্যান কপি তৈরি করি। 

কিন্তু কিছু একটা গোলমেলে হয়ে যায় সেখানেই। ইমির স্ক্যান শেষে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহ হতে থাকে তার মস্তিষ্কে। যেন শেষ পর্যায়ে এসে সে তার ডাটা গুলি দিতে অসম্মতি জানাচ্ছিল। কেউ অবচেতন অবস্থায়ও এতটা শক্তিশালী হয় সেটা তুমি নিজে না দেখলে কখনো বিশ্বাস করতে পারবে না ইমন। শেষ অবধি আমাকে আরও বৈদ্যুতিক প্রবাহ বাড়াতেই হল বাধ্য হয়ে। সাক্ষাত শয়তান হয়ে গিয়েছিলাম আমি। একবারও মেয়েটার জন্যে মায়া লাগেনি আমার, অথচ আমি জানতাম আর ৫ভোল্ট বাড়ালেই মেয়েটা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। যাই হোক ইমিকে শেষ পর্যন্ত পুড়ে যেতে হয়নি। তবে মেয়েটা একদম শান্ত হয়ে গেলো নিমিষেই। 

তুমি বিশ্বাস কর আমি চেষ্টা করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম যাতে কোন ক্ষতি না হয় মেয়েটার। কিন্তু মেয়েটার জেদের কারণে আমাকে এমন পিশাচের মত হতে হয়েছে। তখনও আমার ভেতর কোন অনুতপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বিশ্বাস কর,  নিজের হাতে সুইচ টিপে মানুষ হত্যা করলাম কিন্তু সেটাকে কোন অপরাধই মনে হচ্ছিল না। কারণ আমি তাকে ঠিকই বাঁচিয়ে রেখেছি। 

হ্যাঁ, আমার প্রোগ্রামে এখন ইমি আর আমি বন্দী অবস্থায় আছি। তুমি খুব ভালো করে খেয়াল করবে দুইটি ফাইল বার বার করে নিজেদের প্রায়োরিটি পরিবর্তন করছে। কিন্তু কেন, কিভাবে এইসবের কোন উত্তর, কোন লজিক নেই।

যাই হোক, এবার সিমুলেশনের কথায় আসি। আমার উন্নতমানের যেই পোর্টেবল সুপার কম্পিউটারটাতে এক্সেস ছিল সেটাতে এই প্রোগ্রামটা হোস্ট করি। আমি জানি এটা নিরাপদ, কারণ এটার সাথে বাইরের নেটওয়ার্কের কোন রকম সংযোগ নেই। প্রায় ১ দিন প্রোগ্রামটা রান করার পর ব্যাপারটা নজরে আসে। তোমার কথাই সত্যি, এই পুরো প্রজেক্ট পয়েন্ট লেস। যেখানে কোন চাহিদা নেই সেখানে এই ধরণের পৃথিবীর কোন প্রয়োজনই নেই। আমি এত পরিমাণ মল, কমপ্লেক্স আর এত পরিমাণ সুসজ্জিত লোভনীয় জিনিস সেখানে দিয়ে রেখেছিলাম যে তুমি  আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত এই ধরণের জিনিস বাস্তবে পেলে লাফিয়ে উঠবে। 

কিন্তু ঘটনা তার সম্পূর্ণ বিপরীত কিছু হয়েছে। বেশ অনেকটা সময় ঘোরাঘুরির পর ইমি আর আমি দুজনেই দুটি এমুনেশন শপে যাই। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় এমুনেশন নিয়ে পুরো এলাকা তা ছড়িয়ে দেই। যেহেতু সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে তাই নিউক্লিয়ার ব্যবহারেও তাদের কোন মানা ছিল না, আর আমিও কোন বাধা দেই নি। 

দেখতে দেখতে ২৪ ঘণ্টা শেষ হবার আগেই তারা পুরো ভার্চুয়াল পৃথিবীটা ধ্বংস করে দেয়। তবে তার আগে ইমি আমাকে সেখানে খুন করে। কিংবা বলতে পারো খুন করার চেষ্টা করে। কারণ সেখানে তো এক্সিডেন্টলি কেউ মারা যেতে পারে না। তাই ইমির আঘাতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি ঠিই, কিন্তু মারা যেতে পারি নি। 

হ্যাঁ, এখন যেই ফাইল দুইটির তুমি বার বার প্রায়োরিটি পরিবর্তন হতে দেখছ সেই দুইটিই আসলে আমাদের প্রোফাইল। আমার করা পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও আমাদের কোন পরিবর্তন হয়নি। আমরা এতে আটকে গেছি। আর এখান থেকে সরাসরি মুক্তি দেবার কোন পদ্ধতিও নেই। আমাদের মস্তিষ্কের সাধারণ সিগন্যাল থেকে প্রাপ্ত ডেটা এনালাইসিস করে যখন আমাদের সকল নিউরনের মৃত্যু ঘটবে বলে উপাত্ত দিয়েছে, ঠিক সেই সময় পরেই আমাদের আক্ষরিক অর্থে মৃত্যু কিংবা প্রোগ্রাম টার্মিনেট হবে। এর আগে কখনোই এটা করা সম্ভব নয়।

এরপর যেমন করে হুট করে মেসেজ শুরু হয়েছিল তেমনি হুট করেই মেসেজের সমাপ্তি। ইমন পুরাই বোকা বনে গেলো এই মেসেজ শুনে। তারপর সত্যি সত্যি পোর্টেবল সুপার কম্পিউটারের এক্সেস দেখতে শুরু করলো। সত্যিই সেখানে কিছু নেই তবুও বেশ সূক্ষ্ম একটা পরিবর্তন লক্ষণীয়। আর এই পরিবর্তনটাও প্রোগ্রামের পরিবর্তনের মতই ঘটছে। 

পুরো দুই ঘণ্টা মাথায় হাত চেপে বসে রইলো ইমন।  কারণ এতক্ষণে আসল ক্ষতিটা হয়েই গেছে। সে আসার পর ঐ সার্ভারে নতুন গেম আপলোড করা হয়েছিল। এবং গেমের সফল টেস্টিং শেষে ঐ ডাটা নিয়ে মূল গেম সার্ভারে আপলোড করা হয়েছে। আর মূল গেম সার্ভারই মূলত এই গেমের ডিস্ট্রিবিউশন, পয়েন্ট সংরক্ষণ, অনলাইন গেমার প্রোফাইল আপডেট এবং তাতে পূর্ণ পরিবর্তন করতে সক্ষম। আর এখানে যদি ইরণের সেই প্রোফাইল দু'টি চলে গিয়ে থাকে তাহলে এই মুহূর্তে আর কিছুই করার নেই তার। কারণ প্রতিটা গেম কনসোলে এই প্রোগ্রাম কপি হয়েছে। প্রতিটা অনলাইন স্টোরে এই গেমের কপি সংরক্ষণ হয়েছে এবং তাদের এনক্রিপশন অনুযায়ী এগুলি সিকিউরডও করেছে নিজেদের। 

ঠিক এই ভয়টা মনে নিয়ে যখন তাদের মেইন সার্ভার চেক করতে বসল ফলাফলটা ঠিক তাকে গালে চাপড় দিল। তার ধারণাই সত্যি। অন্তত আগামী ৩০ বছর এই প্রোগ্রাম দুনিয়ার প্রতিটি নেট কানেক্টেড সার্ভার, পিসি, মোবাইল এমনকি কনসোলে সংরক্ষিত থাকবে। পুরো হার্ড ড্রাইভ মুছে দিয়েও একে কিছুই করা সম্ভব হবে না। আর পুরো পৃথিবীর ব্যাকআপ পাওয়ার কখনোই অকেজো হবে বলে মনে হয় না। অন্তত হলেও মোবাইল আর কনসোল মেমরিতে এই দুটি ভার্চুয়াল স্বত্বা বেঁচে থাকবে। 

মানুষের হাজার কোটি বছর ধরে খোঁজ করা কাঙ্খিত অমরত্বের একরকম উপায় পাওয়া গেলো ঠিকই, কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায়ে...




═══════════════════════════════════
●●●● সংশোধন সহযোগিতায় কৃতজ্ঞতাঃ বর্ষা আপু ●●●●


Read More »
Wednesday, November 19, 2014

হিজিবিজি ভাবনা



একজন কবি তার বিখ্যাত কবিতাটা লেখার পূর্বে ছন্দগুলিকে মনে মনে সাজাতে থাকে, তারপর সেই ছন্দ কবির আঙ্গুল ছুঁয়ে কলমের কালি রূপে কাগজের পাতায় স্থান নেয়। ঠিক এই একই ব্যাপার ঘটে গল্পকারের বেলাতে। সেও তার গল্পটাকে প্রথমে মনের মধ্যে গুছিয়ে নেয়, আর তারপর সেটাকে শব্দের গাঁথুনিতে ধীরে ধীরে ঘটনার রূপে আমাদের সামনে নিয়ে আসে। এই একই সূত্র সুরকার, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, চিত্রশিল্পীর ব্যাপারেও ঘটে।

চিত্রশিল্পী হাজার হাজার দৃশ্য থেকে মনের ক্যানভাসে প্রথমে তার চিত্রটার লাইনগুলিকে ফুটিয়ে তোলে। তারপর ধীরে ধীরে রঙ গুলিকে সেই চিত্রটাতে ছড়িয়ে দিয়ে মৌলিক অংশটাকে পূর্ণ করে। তারপর সত্যি সত্যি হাতে তুলে নেয় রঙ-তুলি। ক্যানভাসে দ্রুত হাতে একটা রঙের পর আরেকটা রঙ ফেলে ফেলে মনের সেই চিত্রটার মত করে রূপদানে লেগে পড়ে। সৃষ্টি করে তার অসামান্য শিল্পকর্ম। মানুষ মুগ্ধ নয়নে সেই সৃষ্টিকর্মকে উপভোগ করতে থাকে। মুখে মুখে তার প্রশংসার স্থান নেয়। মাঝে মাঝে সময়ের শ্রেষ্ঠ চিত্র হিসেবে খেতাব পেয়ে যায়। তাতেও সেই শিল্পটির সঠিক মূল্যায়ন না হলে সময় একে এতটাই মূল্যবান করে দেয় যে শত সহস্র বছর পার করলেও সেই চিত্রটি অন্য সবার থেকে আলাদা ভাবে মূল্যায়িত হয় সকলের কাছে।

কিন্তু একবারও কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
যে চিত্রটি শিল্পী এত সময় নিয়ে, এত শ্রম দিয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলল, সেটা তার মনের ক্যানভাসে থাকা চিত্রটার অবিকল রূপ পেয়েছে কি না? যে রঙ আর যেই অভিব্যক্তিটি শিল্পী মনে নিয়ে আঁকতে শুরু করেছিল তা পরি-পূর্ণরূপে কাগজের ঐ ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে কিনা?

হয়তো কেউ কেউ সত্যি সত্যি মনের ক্যানভাসের অবিকল রূপটা কাগজের ক্যানভাসে তুলতে পারেন। কিন্তু যেই শিল্পকর্মটিতে তার ১ শতাংশ পরিমাণ অমিল থেকে যায়! সেই ১শতাংশ পরিমাণ পূর্ণতা পেলে এই অমূল্য শিল্পটা আরও কত বেশি পরিমাণে আকর্ষণীয় হতো সে হিসেব কি কেউ কখনো লাগাতে পারবেন? কেউ কি পারবেন ঐ ১ শতাংশ ঘাটতির প্রশংসা করতে কোনদিন??

সত্যিই পারে কি কেউ মনের গহীনে সৃষ্ট সুর, ছন্দ, শব্দ আর রঙ গুলিকে শতভাগ বাস্তবে রূপ দিতে ?
সব শেষেও সেই বিখ্যাত শিল্পকর্মটার সৃষ্টির পরে কোন শিল্পীর কখনোই কি কোন আক্ষেপ থেকে যায় না ??
Read More »
Friday, October 31, 2014

সম্প্রতি দেখা সিনেমাঃ Emperor (2012)

গত পরশু চমৎকার একটা মুভি দেখলাম। মুভি যা ইতিহাস এবং গল্প একত্রিত করেছে। মুভিটির নাম Emperor যা ২০১২'র ২৭ জুলাই মুক্তি পায়।



মুভিটির শুরু জাপান আত্মসমর্পণের অংশ থেকে। যেখানে জেনারেল ডাগলাস ম্যাকআর্থার কে তার সহযোগীদের সাথে পাঠানো হয় জাপানে। তারা জাপান আসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে নেতৃত্ব দিয়ে নতুন ভাবে এগিয়ে নিতে আর যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির আলতায় নিয়ে আসতে। আসা মাত্রই জেনারেল বার্নার ফেলাস তৎপর হয়ে উঠে, যাতে কোন যুদ্ধাপরাধী পালাতে কিংবা আত্মহত্যা করতে না পারে। অল্প সময়ের মাঝেই প্রায় সবাইকে তারা ধরে নিতে সক্ষম হয়, তবুও এর মাঝে কয়েকজন আত্মহত্যা করে বসে। বাকি কিছু আমেরিকানরা দেশে এসেছে জেনেই গা'ঢাকা দেয়।



অন্যদিকে জেনারেল বার্নার ফেলাস, যে তার থিসিস করেছিল এই জাপানী সংস্কৃতি এবং  রাজনীতি নিয়ে। তার থিসিস করার সময়ে পরিচয় হয় আয়া নামের এক জাপানি বালিকার সাথে। প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনের ভালোলাগায় পরিণত হয়। কিন্তু পারিবারিক কারণে আয়া ফিরে যায় তার দেশে। পরবর্তীতে বার্নার তার থিসিসের উদ্দেশ্যে জাপান আসলেও, আয়ার সাথে দেখা করাই তার মূল উদ্দেশ্য থাকে। 


কিন্তু এর মাঝেই অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে যায়। জাপান সরকার তখনই জনসাধারণের মনে আমেরিকানদের শত্রু হিসেবে পরিচিতি দিতে প্রচারণা চালাতে থাকে। বিভিন্ন স্তর আর বয়সের মানুষে আমেরিকানদের উপর যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়েই বিদ্বেষ আর আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ পায়।


এদিকে যুদ্ধপরবর্তী জাপানের অবস্থা তখন বেশ ভয়াবহ। বিস্ফোরণের আঘাতে মানুষ আর তাদের জীবন একেবারেই মানবেতর পর্যায়ে। ভেতর ভেতর ক্রোধ থাকলেও সেটা প্রকাশ করতে পারে না। আবার অন্যের সিদ্ধান্তে বেঁচে থাকা সেটাও মেনে নিতে পারে না মন থেকে। ঘৃণা আর আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ সর্বস্তরে, যদিও সেটা তখন নিজেদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। 


কিন্তু এইসব ছাপিয়েও জেনারেল বার্নারের মনে জাপানের মানুষদের জন্যে একটু দুর্বলতা রয়েছে। আর এই দুর্বলতার বড় একটা অংশ আয়া। থিসিস করার সময় আয়ার সহযোগিতায় সে জাপানীদের অতীত সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অনেক কিছুই বিস্তর ভাবে জানতে পেরেছিল। আয়া'র এক চাচা জেনারেল হবার সুবাদে তার থেকে রাজনৈতিক অনেক ব্যাপার জানতে পেরেছিল বার্নার। একই সাথে জাপানের ঐতিহ্য আর একে এগিয়ে নিয়ে যাবার কৌশল কিছুটা আয়ত্ত করতে পেরেছিল সে ঐ সময়।


যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নিজের কাজের পাশাপাশি বার্নার আয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। এখানে আসার পর তার জন্যে একজন জাপানী ড্রাইভার, পথ নির্দেশক এবং দোভাষী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল বার্নার আয়াকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তার সেই ড্রাইভার তাকাহাসিকে প্রদান করে। তাকাহাসিও দায়িত্বের সাথে আয়ার খোঁজ করতে শুরু করে। কিন্তু প্রতিবারই তাকে হতাশ হতে হয়। প্রতিবারই আয়াকে খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পায় বোমা হামলায় নিশ্চিহ্ন এলাকার অবস্থান। 


অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের তথ্য যাদের কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তারা সবাই এইসব তথ্য দিতে নারাজ। আমেরিকানদের সরাসরি সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। কিন্তু তাতে দমে যায় না জেনারেল বার্নার। আসলে সে নিজেও জানত জাপানী নেতাদের সম্মানেই জাপানের কোন সাধারণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে উচ্চ মর্যাদার কেউ এগিয়ে আসবে তাদের কাজে অগ্রগতি আনতে। তাই সে ভিন্ন পথে এগুতে থাকে, বেছে নেয় বন্দী যুদ্ধাপরাধীদের। সেই ধারাবাহিকতায় গভর্নর থেকে একজন যুদ্ধাপরাধী কানয়ী'র নাম জানতে পারে।


জেনারেল দেখা করে কানয়ীর সাথে। জেনারেল খুব জোর দিয়ে জানতে আগ্রহী হয় সম্রাট হিরোহিথো কি সরাসরি পার্ল হারবার এর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না সেই সম্বন্ধে। কিন্তু কানায়ী জানায় ঐ সময়টা ছিল বেশ গোলযোগপূর্ণ, সম্রাট নিজেও বেশ গোলমেলে ছিলেন এই নিয়ে। গভর্নর বিভিন্ন ভাবে উপদেশ আর নির্দেশ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তাই সম্রাটের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক নির্দেশনাই গভর্নর দিতে পেরেছিলেন ঐ সময়। প্রকৃত সম্রাট কি চাইতেন তা তার ধারণার বাইরে।


বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে জেনারেল বার্নার জেনারেল ডাগলাস এর সাথে সম্রাট হিরোহিথোর সাক্ষাত করার ব্যবস্থা করে। এর মাঝে বেশ চমকপ্রদ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য পেতে থাকে জেনারেল বার্নার। একই সাথে নিজের বুদ্ধিমত্তা আর জাপানিদের সংস্কৃতির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সমানভাবে নিজের কাজ এবং জাপানের স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করে এগিয়ে যায় সে।



মুভিটিতে জেনারেল বার্নারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Matthew Fox আর জেনারেল ডাগলাস এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Tommy Lee Jones। পরিচালক পিটার ওয়েবার চমৎকার ভাবে ইতিহাসের সাথে জেনারেল বার্নারের ভালবাসাকে তুলে ধরেছেন। মুভিটা যতটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত অনুভূতি দেবে তার চেয়েও বেশি পরিমাণে জেনারেল বার্নার আর আয়ার ভালোবাসাকে বর্ণনা করবে। বার্নারের এই ভালোবাসার কারণেই জাপানের সম্রাট হিরোহিথোর সম্মান রক্ষা করে পুরো ব্যাপারটাকে একটা চমৎকার সমাপ্তিতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল। 



যারা ইতোমধ্যে মুভিটি দেখেছেন তারা অবশ্যই উপভোগ করেছেন বলে আশা করি। আর যারা এখনো দেখেন নি তারা সময় নিয়ে দেখতে পারেন। আশা করি মুভি দেখার পর সময়টা নষ্ট করেছেন বলে মনে হবে না।

মুভির ট্রেইলার : 





- !?! -



Read More »
Sunday, October 26, 2014

কল্পগল্প : সময় ভ্রমণে হারানো ছেলেটি……



ইশতিয়াক খুব ছোটবেলাতেই বাবা-মা'য়ের সাথে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পাড়ি জমায়। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল তাদের। নিজেদের গুছিয়ে এনে তার বাবা একটা ছোট ব্যবসাও শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎই একটা এক্সিডেন্টে ইশতিয়াকের বাবা-মা দুজনেই প্রাণ হারান। ইশতিয়াক তখন সবে মাত্র কলেজ উঠেছে। সময়টা খুব খারাপ ছিল তার জন্যে। মোটামুটি মেধাবী হওয়ায় স্কলারশিপটা পেয়ে যায়, কিন্তু বাবার ব্যবসাটা ধরে রাখতে পারেনি। আসলে ব্যবসা আর পড়ালেখা একসাথে চালিয়ে নেয়া সম্ভব ছিল না তার পক্ষে। তাই সেটাকে গুটিয়ে মোটামুটি একটা ব্যবস্থা করতে পেরেছিল। দ্রুতই অফিস সহকারী হিসেবে একটা পার্টটাইম জবও পেয়ে যায়। খারাপ সময়ে এই ছোটখাটো ব্যাপারগুলি তাকে খুব সহায়তা করে। এরপর বছর কয়েক বাদে ভার্সিটি শেষ করে সেখানেই ল্যাব ইন্সট্রাকটর হিসেবে জয়েন করে। এর মাঝে অবশ্য পি.এইচ.ডি. র জন্যে এপ্লাই করে রেখেছিল।

এমনিতে ইশতিয়াক খুব রিয়েলিস্ট ছিল, আবেগ গুলিকে খুব প্রশ্রয় দেয়নি কখনোই। এটাও অবশ্য বড় একটা পয়েন্ট ছিল তার এগিয়ে যাওয়ার পেছনে। কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে সে প্রায়ই ভাবতো, ভাবতো সময়টাকে যদি কোনভাবে পেছনে নিয়ে আসা যেতো। তাহলে হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনাটা তার জীবনে এভাবে আসতো না। বিস্তর পড়াশোনাও করেছিল এই নিয়ে। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং করেও সময়কে নিয়ে ফিজিক্সের প্রতিটা যুক্তিকে সে খুব গুরুত্ব দিয়ে আয়ত্ত করেছিল। তার অবসর সময়টাতে সে সময়টাকে পেছনে নেবার কৌশল নিয়েই কঠিন সব হিসেব করে কাটাত।

সে যেভাবেই তার সূত্রগুলিকে গুছিয়ে নিয়ে আসতো সব ঐভাবে ঠিকঠাক এসে একটা নির্দিষ্ট স্থানে থেমে যেতো। অতীত সময়ে বর্তমানকে নিয়ে যাবার প্রয়াস যেখানে শুরু সেখানেই তার সূত্রগুলি আর কাজ করতো না। কিন্তু এই পার্টটা চুকিয়ে ফেলতে পারলে সে খুব সহজেই অতীত সময়ে চলে যেতে পারে। হিসেব করে দেখেছে শুধু একটা অংশকে সে যদি কাল্পনিক মান ধরে নেয় তাহলে বেশ কয়েকটা উপায়ে সে অতীতে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু কোন মানটাকে কল্পনা করবে আর কতটুকু ধরে কল্পনা করতে হবে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা।

একদিন ল্যাবে বসে এই নিয়েই ডুবে ছিল। তখন তার এক ছাত্র হুট করে বলল " স্যার সময় শেষ হয়ে এসেছে "। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল সত্যিই ল্যাবের সময় পার হয়ে গেছে। সে দ্রুত ডেস্ক ছেড়ে উঠে গেলে, ছাত্রদের কাজের অগ্রগতি দেখে তা নোট নিয়ে তাদের ছেড়ে দিতে লাগলো। সবার কাজ দেখতে দেখতে বেশ অনেকটা সময় চলে যায়। এরপর ছাত্রদের কাজের নোটটা আজকের দিনে এন্ট্রি করে আবার নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে। সে যাবার আগে যেই টুকু করছিল সেখানে একটা সূত্রে কেবল মাত্র সময়টাকে বসিয়েছিল, কিন্তু তার মান দেয়নি। হঠাৎ কি মনে করে সে সময়ের মানকে কমিয়ে নিয়ে আসলো। তার সূত্রে এখন বর্তমান সময় অতীত সময় থেকে ধীর গতির, আর অতীত সময় স্ট্যান্ডার্ড সময় হিসেবেই এগিয়ে আসছে। এতটুকু দেখেই তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। হ্যাঁ, এটাই তো সেই কাল্পনিক মান। সে যদি কোনভাবে বর্তমান সময়ের গতিটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলেই তো অতীতে প্রবেশ করতে পারবে। কিন্তু এখনো পুরো সমীকরণ সাজানো সম্পন্ন হয়নি। তাকে পুরোটা সাজিয়ে শেষ করতে হবে। বের করতে হবে ঠিক কি পরিমাণে সময়ের গতি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

টানা কয়েক সপ্তা সে এই নতুন ধারণার উপর ব্যয় করলো। তার কষ্ট মোটামুটি সার্থকই বলা যেতে পারে। সে যখন বর্তমান সময়কে স্ট্যান্ডার্ড সময়ের এক চতুর্থাংশে রূপান্তর করছে তখন অতীত সময়ের গতি বর্তমান সময়ের উপর ওভার-লেপ করছে। অতীত ৩ গুন সময় পার করার পর বর্তমান অতীতের ৪র্থ সাইকেলের সাথে একটা সাইকেল পূরণ করছে। ফলে ৪ মিনিট সময় নষ্ট করে ৩ মিনিট পেছনে যাওয়া যাচ্ছে। লজিক্যাললি এই সবই প্রমাণ হচ্ছে যে শুধু সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সে অতীতে ফিরে যেতে পারবে। কিন্তু সে তারপরও একে এভাবে প্রকাশ করতে নারাজ। কারণ এটা সম্পূর্ণই উদ্ভট একটা লজিক। সময়কে এখনো কোনরূপে সম্প্রসারণ কিংবা সংকোচন করা যায়নি। তাহলে কিভাবে সে এই সূত্র প্রমাণ করবে??

শুরু হল নতুন চেষ্টা, কিভাবে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে সময়ের উপর প্রভাব পরীক্ষা করতে শুরু করলো। আলাদা আলাদা সূত্রে বসিয়ে সময়ের নিয়ন্ত্রন নিতে চাইলো। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবেই প্রতিটার রেজাল্ট তাকে হতাশ করতে লাগলো। সময়ের ক্ষিপ্রতাকে সে কোনভাবেই বাগে আনতে পারছিল না। আর এর মাঝেই সে একটু বেশি পরিমাণে হতাশ, অমনোযোগী আর উগ্র হয়ে উঠছিল। ল্যাবের ছোট কয়েকটা ভুলের জন্যে সে দুজন ছাত্রের সাথে ইতোমধ্যে খারাপ ব্যবহার করেছে। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে এই খবর যাওয়ার পর তাকে ৬ মাসের জন্যে অফ ডিউটিতে পাঠানো হয়। এর মাঝে সে যদি মানুষিক উন্নতি করতে পারে তাহলে পুনরায় নিজের জব ফিরে পাবে, নয়তো বহিষ্কার করা হবে।

তাতে অবশ্য দমে যায়নি ইশতিয়াক। এমনিতেও নিজের কাজের বাইরে এইসব একরকম অসহ্য লাগছিল তার। চাকরিটা ছেড়েই দিবে চিন্তা করছিল। ওদিকে ব্যাংকে মোটামুটি কিছু টাকা পয়সা রয়েছে, শহরের বাইরে বছর খানিক কোন উপার্জন ছাড়াও খুব আরামেই কাটাতে পারবে সে। ভার্সিটির দেয়া রুমটা ছেড়ে দিয়ে কান্ট্রি সাইডের একটা বাসায় উঠলো পরের দিনই। খুব বেশি মাল-সামানা বলতে বাক্স ভর্তি বই আর বেশ কিছু ইন্সট্রুমেন্ট যা থিসিস করবে বলে আস্তে ধীরে জমাচ্ছিল। ছোট একটা ট্রান্সপোর্ট কারেই সব এঁটে গেল। সন্ধ্যার পরেই এপার্টমেন্টে গিয়ে উঠলো। বইয়ের বক্স গুলিকে এক কোনে রেখে ইন্সট্রুমেন্ট আর নিজের থিসিসের কাগজ গুলিকে বের করেই বসে পড়ল।

এভাবেই চলছিল, নিয়ম মত খাবার খাওয়ার কথাও ভুলে গিয়েছিল সে। মাঝে মধ্যে এমনও হয়েছে যে ২ দিনে একবার মাত্র বাইরে গিয়েছে খেতে। আর ঘুম! সেটা তাকে দেখলে মনে হয় পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছে। কিন্তু এর মাঝে কাজের কোন অগ্রগতিই হয়নি তেমন। সময়কে ধীর করার চেষ্টা করছিল সে। কিন্তু একই ভাবে দেখল বাস্তবে সময়কে কোনভাবে কমিয়ে আনতে পারছিল না। তাই সে ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে বসিয়ে চেষ্টা করছিল এই সময়টাকে কমিয়ে নিয়ে আসার জন্যে। কিন্তু কোনভাবেই এটার কোন কিনারা হচ্ছিল না, একেবারেই হতাশায় ডুবে যাচ্ছিল সে। এক সন্ধ্যায় যখন ঘর অন্ধকার করে গভীর ভাবে নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে ভাবছিল, তখনই হুট করে মনে পড়ে আলোর গতির ব্যাপারটা।

আলোর গতি থেকেও যদি বেশি দ্রুত ছোটা সম্ভব হয় তাহলে হয়তো সময়টাকে সঙ্কুচিত করে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু সেটার জন্যে তাকে এই গতিকে ভাঙ্গতে হবে। নতুন উদ্যমে চলতে থাকে কাজ। এবার বেশ জোরেশোরেই চালাতে থাকে। নতুন করে আলোর উপর চর্চা করতে থাকে। কিন্তু যতই এগিয়ে যায় ততটাই পেছাতে থাকে তার কাজের সম্ভাবনা। কারণ আলোর গতি থেকে দ্রুত ছোটা তখনও সম্ভব না। কিন্তু তাই বলে এভাবে হালও ছাড়তে রাজী নয় সে। ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে লাগলো। চিন্তা করতে করতে হঠাৎ খেয়াল হল, যদি আলোর গতিকে অতিক্রমই করা না যায় থাকুক, কিন্তু তাকে তো বিভাজিত করা যেতে পারে। যেখানে আলো তার নিজস্ব গতিতেই যাবে, কিন্তু সে সেই গতির ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে কাজ করতে পারবে। সপ্তাহ কয়েক পরিশ্রম করে একটা ফর্মেও চলে আসলো। যদিও সেটা সম্পূর্ণ নয়, কিন্তু লক্ষ্যের সন্নিকেটে চলে এসেছিলো।

এরই মাঝে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাকে যোগাযোগ করার জন্যে চিঠি পাঠিয়েছে। যাবে না যাবেনা করেও শেষ পর্যন্ত গেলো ভার্সিটিতে। অবশ্য অন্য একটা কারণও ছিল। এখন সে ভার্সিটিতে যেতে পারলে অনেক প্রয়োজনীয় ম্যাটেরিয়াল এবং শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে তার গবেষণাকে এগিয়ে নিতে পারবে। তার এই মানুষিক উৎফুল্ল অবস্থা দেখে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষও পুনরায় তাকে নিয়োগ দিল, যদিও সাথে করে বেশ কিছু রেস্ট্রিকশন দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ইশতিয়াক তাতেও খুশি, কারণ সে ল্যাবটা পাচ্ছে। যদিও কাজ শুরু করার আগ্রহ দমিয়ে রাখতে পারছিল না কিন্তু বাধ্য হয়েই পুরো একটা মাস দাঁতে দাঁত চেপে সে তার প্রজেক্টের কাজ করা থেকে বিরত থাকলো। আসলে সেই অর্থে বিরতও থাকে নি একেবারে, এর মাঝেও বেশ অনেক গুলি যুক্তি সে সার্ভার কম্পিউটার থেকে চেক করে নিয়েছিল। মোটামুটি তার লজিক সবগুলিই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পজিটিভ রেজাল্ট দিচ্ছিল তাকে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত পুরোটা চেক না করতে পারছে ততক্ষণ কোনভাবেই শান্তি পাচ্ছিল না মনে মনে।

মাসটি পেরুতেই সামার সেমিস্টার শুরু হয়ে গেলো, এই সেমিস্টারে তার কাজ কিছুটা কম থাকে। ল্যাব মোটামুটি ফাঁকাই থাকে, তাই ইচ্ছে মত নিজের কাজ নিয়ে নেমে পড়ল এই সুযোগে। সার্ভার কম্পিউটারে তার সকল লজিক এবং ডেটা গুলিকে ইন্সট্রাকশন আকারে ইনপুট দিতেই তার ৬ টি দিন চলে গেলো। এর পরের প্রায় ৪ দিন ডেটা প্রসেস করতেই ব্যস্ত থাকলো সার্ভার কম্পিউটারটি। ৪ দিন শেষে প্রাপ্ত রেজাল্ট দেখে ইশতিয়াক আনন্দে রীতিমতো চিৎকার দিয়েই ফেলেছিল।

এখন মোটামুটি নিশ্চিত তাকে কি করতে হবে। ১ বছরের ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে আবার চলে গেলো সেই কান্ট্রি-সাইট ফ্লাটে, সাথে নিয়ে গেলো প্রয়োজনীয় সকল ইন্সট্রুমেন্ট। স্টাডি রুম পুরোটা খালি করে ল্যাব তৈরি করলো। তার নিজের জমানো এবং বাবার ব্যবসার বেশ অনেক টাকা একত্রে খরচা করতে শুরু করলো প্রজেক্টের জন্যে। ইন্সট্রুমেন্ট সব একত্র করার পর সেই ছোট ল্যাবটাকে ল্যাব না বলে একটা ম্যাকানিকের জাঙ্গ স্টোরও বলা চলতো। টুলস আর মেশিনের ছড়াছড়ি ছিল রুমটা জুড়ে। রাত দিন জুড়ে নিজের মত কাজ করতে লাগলো। এর মাঝে তার পি.এইচ.ডি. আবেদনের কনফার্মেশন লেটারও আসলো। কিন্তু প্রোজেক্টের জন্য বাকি সব বাদ দিয়ে দিল সে। সাড়ে তিন মাস পর মোটামুটি তার প্রজেক্ট তার সামনে দাড়িয়ে গেল। দেখত ছোট্ট একটা টানেলের মত, উচ্চতায় তার নিজের সমান আর দৈর্ঘ্যে ১২ ফিট। টানেলের দু'পাশেই ভারী সব যন্ত্রপাতিতে ভরপুর।

এবার পরীক্ষা করার পালা, কিন্তু কিভাবে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবে সব ঠিকঠাক মত হচ্ছে?? একবার সেট করে অতীতে পাঠানো শুরু করলে তো আবার গিয়ে অতীত থেকে চেক করে আসা সম্ভব নয়। আবার এমন হুট করে এমন কাউকেও পাওয়া যাবে না যাকে এই প্রোজেক্টে টেস্ট সাবজেক্ট হিসেবে কাজ করতে রাজী করাতে পারবে। আবার নিজের আগ্রহের কারণে অন্য কাউকে হুট করে জানাতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। এইসব তালগোল পাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল, সে নিজেই নিজেকে দিয়ে পরীক্ষা চালাবে। বাইরে এমনিতেও তেমন কোন জরুরী কাজ নেই। সবকিছু একটা কম্পিউটারে সেট করা থাকবে। যতটুকু সময় সে পেছনে যেতে চায় ততটুকু সময় পর্যন্ত এই সিস্টেমটা চলতে থাকবে। তারপর বাকিটা ঠিকঠাক চললে সে থাকবে কাঙ্ক্ষিত অতিতে।

ঠিক করলো রবিবার সে এই টেস্ট চালাবে, হাতে আছে চারটা দিন। সময়টাকে কাজে লাগলো সে। তার পুরো থিসিসের বর্ণনা বিস্তারিত ভাবে লিখতে শুরু করলো। প্রতিটা সূক্ষ্ম হিসেব পর্যন্ত লিখে শেষ করতে করতে শুক্রবারে পৌঁছল। ইশতিয়াক ধর্মকর্মের প্রতি কখনোই তেমন মনোযোগী ছিল না, তবুও শেষ বারের মত প্রার্থনা করতে গেলো। পুরোটা পথ সাইকেলে চড়ে আসলো গেলো। সন্ধ্যার পর দামী একটা রেস্তোরা থেকে সুস্বাদু দামী খাবার দিয়ে ভুরি ভোজ করল। তারপর সরাসরি চলে গেলো সিনেমা দেখতে, যদিও সিনেমাতে কি দেখছিল তাতে কোন আগ্রহ কাজ করছিল না। সময়টাকে নষ্ট করার তার মূল লক্ষ্য ছিলো। শেষে ফিরল নিজের ফ্লাটে। এই দীর্ঘ সময়ের ক্লান্তি কাটাতে একটা রাত আর পরের অর্ধেক দিন নিয়ে নিল তার। ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে দুপুর হয়ে গেলো। উঠেই দ্রুত চলে গেলো তার ল্যাবে। সবকিছুকে আবার আগা গোঁড়া চেক করতে বসে পড়লো। আজ রাতেই সে নিজেকে নিয়ে দুঃসাহসিকতা দেখাবে এই যন্ত্র-দাবনের মাধ্যমে।

পুরোটা বিকেল আর সন্ধ্যা লাগিয়ে চেক করলো ইশতিয়াক। সবকিছুই প্লান অনুসারে ঠিকঠাক আছে। ডিনার শেষ করে কম্পিউটারে হিসেব মোতাবেক সময়টাকে সেট করলো ঠিক তার বাবা-মায়ের এক্সিডেন্টের আগের দিনে। তারপর কাউন্ট ডাউন শুরু করে গিয়ে দাঁড়ালো টানেলের এক প্রান্তে। ধীরে ধীরে কাউন্ট ডাউন শেষ হতেই ধীরে ধীরে গুঞ্জন তুলল তার যন্ত্রদানব। প্রথমে মৃদু শব্দে আর অল্প আলোক উজ্জ্বলতায় শুরু হল কার্যক্রম। কিছুক্ষণের মধ্যেই দৃষ্টিতে অসহ্য আলো আর বিকট শব্দ তৈরি করতে শুরু করলো সেটা। কানে হাত চেপে অসহ্য হয়ে চিৎকার শুরু করলো সে....





‗‗‗ ইন্সিডেন্ট # ১ ‗‗‗
‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾

ঠিক কত সময় চিৎকার করেছে সেটা জানে না। কিন্তু মনে হল অন্তত কাল ধরে সে চিৎকার করেই যাচ্ছে। আর প্রতিমুহূর্তে তার চিৎকার তার কাছেই আরও শক্তিশালী হয়েই ফিরে ফিরে আসছে। শরীরের প্রতিটা কোষের মধ্যে অগ্নিদগ্ধয়ের জ্বালা অনুভব করছিলো সে। ইচ্ছে করছিল ছুট লাগায় কিন্তু ছুট লাগাবার মত কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছিল না। অসহ্য এই যন্ত্রণা চলতে থাকলো, চলতেই থাকলো বিরামহীন ভাবে......



‗‗‗ ইন্সিডেন্ট # ২ ‗‗‗
‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾

হুট করেই সব যন্ত্রণার অবসান ঘটলো। সকল গুঞ্জন থেমে গেলো, মনে হল তার পুরো কাজ ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার আলো যেমন উজ্জ্বল ছিল ঠিক তেমনই উজ্জ্বল রয়েছে এখনো। তবে সেটাও আর অসহ্যের পর্যায়ে নেই। আলোক কিরণ গুলি যেমন ছুটে যাচ্ছিল তাকে স্পর্শ করে। কিন্তু সে কোথায়?? তার শরীরটা কোথায় পৌঁছালো????



‗‗‗ ইন্সিডেন্ট # ৩ ‗‗‗
‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾

হুট করেই উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাবার মত করে দ্রুতগতিতে পড়তে শুরু করলো। হ্যাঁ, এখন নিজের শরীরটার অস্তিত্ব আবার অনুভব করতে পারছে। বাতাসের ঘর্ষণ অনুভব হচ্ছে এখন। পিছনের দিকে বাতাসের ঘর্ষণ কিছুক্ষণের মধ্যেই পিড়া দিতে শুরু করলো। চামড়া যেন হাড় ভেঙ্গে উল্টো দিকে চলে আসতে চাইছে। বিরামহীন ভাবে এই পড়ে যাওয়া চলতেই থাকলো, কিছু একটা ধরার জন্যে হাত পা ছুটাতে লাগলো। কিন্তু আঁকড়ে ধরার মত কিছুই পেলো না......



‗‗‗ ইন্সিডেন্ট # ৪ ‗‗‗
‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾‾

ঝুপ করেই সব অন্ধকার হয়ে গেলো। প্রচণ্ড ধাক্কা অনুভব করলো পিছনের দিকে। ব্যথায় শরীর কুঁকড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হাত-পা নাড়ানোর মত কোন শক্তি যোগাড় করতে পারছিল না হাজার চেষ্টা করেও। মস্তিষ্কের ভেতরে চিনচিনে একটা অসহ্য ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছিল এরই মাঝে। হয়তো হিসেবে কোথাও বিরাট গোলমাল রয়ে গিয়েছিল। কিংবা তার মেশিনটা কোন কারণে ঠিক মত কাজ করেনি। এইসব করতে করতেই চেতনা হারাতে শুরু করল......



… … … … … … … … … … … …





নিজেকে স্কুলের একটা খেলার মাঠে ঘাসের উপর আবিষ্কার করল ইশতিয়াক। মাটিতে পড়ে আছে সে। এখানে কি করে এলো?? রাত একেবারেই শেষ পর্যায়ে, ভোরের আলো দেখা যাচ্ছে। ব্যথায় সাড়া শরীর নাড়ানো দায়। নিজেকে চরম আকারের আহাম্মক মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। ওভাবেই পড়ে থাকলো বেশ কিছুক্ষণ। আস্তে আস্তে ঝিম ধরা এই ব্যথা কমতে শুরু করলো। মোটামুটি যখন চারিদিকে আলো ফুটে গেছে তখন উঠে দাঁড়াবার মত শক্তি পেলো। এখন সে নিশ্চিত তার যন্ত্রদানবে কোথাও কোন ভুল রয়ে গিয়েছিল। তাই তো যা হবার তা না হয়ে উল্টো মানুষিক আর শারীরিক কষ্ট গুলি পেতে হল তাকে। কিন্তু এখানে কি করছে সে? নাকি মেশিন সত্যিই কাজ করে গেছে?? এই মুহূর্তে চিন্তা করার সময় নেই। দ্রুত তাকে বেরুতে হবে স্কুলের ভেতর থেকে। নয়তো এখুনি হাজতে ঢুকতে হবে অনুমতি ব্যতীত এখানে আসার অপরাধে। দ্রুতই মাঠের তারের বেষ্টনী পার করে বাইরে চলে আসলো।

এই প্রথম পরিবর্তনটা লক্ষ্য করলো সে। রাস্তাগুলি অনেকটা সেকেলে এবং অনেকটা অপ্রশস্ত। স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে বেড়াতে দেখল সে আসলে এই রাস্তাটার সাথে খুব পরিচিত। এখনো মনে আছে বামে দিয়ে কিছুদূর এগোলেই একটা আইসক্রিম শপ পড়বে। দ্রুত বামের রাস্তাটা ধরে হাটতে শুরু করলো। তার ধারণা একদম সঠিক প্রমাণ করে স্কুলের পেছনের সেই আইসক্রিম শপটা দেখতে পেলো। আর অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এটা ঠিক ঐ রূপেই দেখছে যেমনটা সে ৮ বছর পূর্বে দেখেছিল!!!! এর মানে তার প্রজেক্টের, এত নিরলস পরিশ্রম, নির্ঘুম রাতগুলি বৃথা যায়নি। তার যন্ত্রদানব তাকে ঠিকই নিয়ে এসেছে ঐ সময়ে। আনন্দে রাস্তায় দাড়িয়েই বাঁদরের মত হাত-পা ছুড়ে নাচতে আরম্ভ করলো।

হুট করেই মনে পড়লো এভাবে সময় নষ্ট করা একদমই উচিৎ হচ্ছে না। আর কিছুক্ষণ বাদেই তার বাবা-মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। আর বেরিয়ে গেলেই তার এতসব কষ্ট সব বৃথা হয়ে যাবে। দৌড়াতে শুরু করলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। স্কুল থেকে খুব দূরে নয় তার বাড়ি, এমনিতেও সে হেটেই স্কুল থেকে বাড়িতে যেতো। কলেজে উঠার পর বাসে আসা যাওয়া করতে শুরু করেছিল। মিনিট ১০ বাদেই নিজের বাড়ির সামনে চলে আসলো। ঐ তো তাদের গাড়িটা দেখা যাচ্ছে ড্রাইভ ওয়েতে। এখুনি তার বাবা আর মা বেরুবে। সে গিয়ে গাড়িটার সামনে দাঁড়াল। আর তখনই দরজা খুলে প্রথমে তার বাবা আর তারপর মা বেরিয়ে আসলো। মনে পরলো ঐ সময়ের কলেজ পড়ুয়া ইশতিয়াক তখনও ঘুমোচ্ছে। তারা কেউ তাকে ডেকে দিয়ে যায়নি। ঘণ্টা খানিক বাদেই সেই ইশতিয়াক ঘুম থেকে উঠেই ছুট লাগাবে কলেজের উদ্দেশ্যে। টেবিলের উপর তার জন্যে নাস্তাটা পর্যন্ত রেডি করে রেখে গেছে আম্মু।

বাবা দ্রুত এসে গাড়ির সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। ইশতিয়াক যে গাড়ির পাশে দাড়িয়ে আছি সেটা যেন তিনি দেখতেই পায়নি। ইশতিয়াকের কিছুটা রাগ লাগলো তাতে। কিছুই না বলে তার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল, আস্তে করে ডাকলো "বাবা" বলে। কিন্তু কোথায় কি? তার বাবা যেন সেই ডাক শুনতেই পায়নি, নিজের মনে রেডিয়েটারের পানির মাপ দেখছে। ওপাশে চেয়ে দেখলো তার আম্মু্ও গাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে। আশ্চর্য! তাকে চিনতে না পারুক, অন্তত অপরিচিত একজনকে দেখে হ্যালো তো বলবেই। কিন্তু কিছুই না! তার বাবা-মা তো এমন স্বভাবের ছিল না। উল্টো মিশুক হিসেবেই পরিচিতি ছিল তাদের প্রতিবেশী মহলে।

এটা দেখে রেগে গিয়েই গলা চড়িয়ে মা'কে উদ্দেশ্য করে বেশ জোরেই বলল, "এই যে শুনছেন??"

ওমা! এতেও তার আম্মুর কোন ভাবান্তর নেই!! এটা কি করে সম্ভব!!! এবার রাগ সহ্য করতে না পেরে একেবারেই আম্মুর সামনে গিয়ে দাড়ালো। কিন্তু উনি ইশতিয়াককে ভেদ করেই যেন তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে। এইবার ইশতিয়াক আশ্চর্য না হয়ে পারলো না। ঘুরে দাড়াতেই গাড়ির দরজার পাশের আয়নায় চোখ পড়লো, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না সে। এইটা কি করে হয়!!!!


আয়নায় শুধুই তার আম্মুকে দেখা যাচ্ছে। ইশতিয়াক তার সামনেই দাড়িয়ে, কিন্তু আয়নায় তার কোন প্রতিবিম্ব নেই। কিছুই নেই....!!!







_________________________
‗‗‗ ওদিকে এপার্টমেন্টে ‗‗‗
──────────────────



আশে পাশের এপার্টমেন্টের মানুষগুলো রাত করে প্রচুর শব্দ শুনতে পারছিল উদ্ভট ছেলেটার রুম থেকে। বিরক্ত হয়ে বেশ কয়েকবার করে দরজায় নক করে, ধাক্কা দিয়ে সাড়া না পেয়ে শেষে পুলিশ ডাকার ভয়ও দেখাচ্ছিল বাইরে দাড়িয়ে। তাতেও যখন কোন সাড়া দিচ্ছিল না ভেতর থেকে তখন একজন সত্যি সত্যিই পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই এপার্টমেন্টের ভেতরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ হয় এবং প্রায় সাথে সাথেই পুরো এলাকাটা অন্ধকার হয়ে যায়।

এর কিছুক্ষন পরেই ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে রুমের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। একটা রুম থেকে ধোয়া বেরুতে দেখে ঐ রুমে গিয়ে বিস্ফোরণের উৎস দেখতে পায়। একটা টানেলের মত জিনিষের সাথে অনেক যন্ত্রযুক্ত ছিল। বিস্ফোরণটা ওখানেই হয়েছে। প্রায় সবকিছুই পুড়ে গেছে, গলে গেছে প্লাস্টিকের মত জিনিষ ছিলো। প্রচণ্ড তাপে রুমের হার্ডবোর্ডের দেয়াল পর্যন্ত বেকে গেছে। কিন্তু সেই উদ্ভট ছেলেটাকে কোথাও পাওয়া যায় নি।

পুলিশের বিশেষ বিভাগের লোক এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুড়ে যাওয়া কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, আর টানেলে সংযুক্ত বিশেষ কিছু যন্ত্র পরীক্ষা করার জন্যে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এত বাজে ভাবে কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে কোন ডেটাই সেখান থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।


শেষ পর্যন্ত মানুষিক ভারসাম্যহীন হারানো ব্যক্তিদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল ইশতিয়াকের নাম।



────────────────────────────────────
♦ অতিমাত্রায় কাল্পনিক গল্প, তাই যুক্তিনির্ভর কোন ব্যাখ্যা এর থেকে প্রদান করা সম্ভব নয়।
Read More »
Monday, September 22, 2014

অগোছালো কথোপকথন.....




: সবাই আস্তে আস্তে অনেক পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছি। চেনার ভেতরেই নতুন করে অচেনা হয়ে যাচ্ছি। হারিয়ে যাচ্ছি একই স্থানে বসে থেকেও।

› সময়ের সাথে সবই বদলায়। প্রকৃতির তো এটাই নিয়ম। প্রকৃতি কখনো নিয়ম ভাঙ্গে না।

: তবুও কেউ পুরানো সুতা আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে চায়। তাদের পরিবর্তন হয়েও হয় না। ভেতরে ভেতরে পুরাতনই থেকে যায়।

› তাই তো তাদের এই প্রকৃতি সাথে নেয় না। ফেলে সামনে এগিয়ে যায়। কি লাভ পুরাতন ধরে রেখে? কি ক্ষতি নতুন কে গ্রহণ করতে?

: লাভ ক্ষতির হিসেব করে তারা পুরাতন আঁকড়ে থাকে না। তবে নতুনের মাঝে নিজেকে নিজের সত্ত্বাকে হারানোর ভয় থাকে। তারা দেখেছে, জেনেছে অনেকেই হারিয়েছে এই নতুনের প্রকৃতিতে। নতুন সময় অনেক কে গ্রাস করেছে পুরাতন ছেড়ে দেবার কারণেই। তাদেরই বা কি দোষ বল??

› পুরাতন কে আঁকড়ে ধরে যদি সুখী হতো, যদি না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস না থাকতো তাহলে সেটাই তো ভালো হত। কিন্তু তা কি হয়েছে?

: তা হয়তো হয়নি। কিন্তু পুরাতন ছেড়ে যারা আপন সত্ত্বাহারা হয়েছে তারাই বা কতটুকু সুখে আছে নতুনত্বে সেটাও কিন্তু দেখার বিষয়।

› তারা ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চেষ্টা করা থামিতে দিলেই তো সব নির্জীব লাগে।

: হয়তো! আবার হয়তো এমনও হতে পারে তারা নিজেদের পুরনো অবস্থানটাকেই খুঁজে চলেছে লোক চক্ষুর অন্তরালে। কে জানে বল?







( এরপর অজানা, কথোপকথন এগুলে হয়তো চলবে। নয়তো এখানেই সমাপ্তি..... )



Read More »
Saturday, September 20, 2014

অপরিচিত এই অন্ধকারে...



ল্যাম্প পোষ্টের নিচে দাড়িয়ে আছি। না, যেদিকটাতে আলো পড়ে সেই দিকটাতে না তার উল্টোদিকে। আলোর আভা আমার গায়েও লাগছে কিন্তু অন্ধকারে এইটুকু আলোর জন্যে অন্ধকারটাকে আরও আপন মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। কাছাকাছি আরও দুইটা ল্যাম্পপোস্টের কোনটাতেই আলো নেই। কে জানে হয়তো লাইট গুলিই চুরি গেছে, আলো দেয়া তো এখন অনেক দূরের ব্যাপার। এ শহরের কেউ যেমন তাদের এই সম্পত্তিগুলির খেয়াল রাখে না আমিও তেমন একজন। কিন্তু আজ চোখে পড়ছে, কারণ এই অন্ধকারে তৈরির পেছনে যেই সম্পদ গুলি হারিয়েছে আমিও তেমন হারিয়েছি। অন্ধকারটাকে আপন মনে হচ্ছে আর সত্যি কথা বলতে কি আলো না থাকাতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছি এই মুহূর্তে। অন্য কোন সময় হলে হয়তো ব্যাপারটা ভিন্ন রকম হত।

রাস্তার ওপারের কলোনির ৩ তলা বিল্ডিংটাতে আমার বসবাসের স্থান ছিল আজ বিকেলেও। কিন্তু বিকেলটা শেষ হতেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। জানলাম আমি এতদিন যে বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছি সেই বিশ্বাসের কোথাও আমার অবস্থান নেই।

বিকেলে এক ভদ্রলোক এসেছিলেন ঐ বাসায়। তাকে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। কিন্তু বাবার মুখটা হুট করেই তাকে দেখে কেমন যেন শুকিয়ে গেলো। যদিও খুব ভদ্রভাবে তাকে বসার ঘরে নিয়ে বসালেন, তারপর বেশ পরিচিত ভঙ্গীতেই কেমন আছে, কি হাল এইসব জানতে চাইছিলেন। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম বাবা চাচ্ছিলেন না এই লোকটি এখানে আরও ১ টা মিনিটও অপেক্ষা করুক। যেন দ্রুত কথা বলে বিদায় করে দিতে পারলেই বাবা বাঁচেন।

আম্মা আমাকে ভেতরের রুম থেকে ডাকলেন। তারপর হাত ধরে নিয়ে আমার রুমটাতে নিয়ে এসে কেমন যেন ঝটপট বুঝিয়ে ফেলার ভঙ্গীতে বলতে থাকলেন-
"এই লোক কিছু বললে বিশ্বাস করবি না একদম। এই লোকের কথায় কিছু আসে যায় না। তুই যেমন আছিস এমনই থাকবি, বুঝেছিস।"
আমি ঠিক বুঝি নি, তবে এটা বুঝেছি আম্মা আসলে কথাগুলি আমাকে বলেন নি। আসলে কথাগুলি সে নিজেকেই বলেছেন আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে। আমিও আম্মার কথা মত দ্রুত বোঝার ভঙ্গী করে বললাম বুঝেছি। তারপর আম্মা আমাকে রুমে রেখেই চলে গেলেন লোকটির সাথে বাবা যে রুমে কথা বলছেন সেই রুমে।

অস্পষ্টভাবে এখান থেকেই শুনতে পারছিলাম তারা কোন একটা ব্যাপারে একমত হতে পারছে না, কথা কাটাকাটি করছে। অকারণেই বুঝে নিয়েছিলাম কোথাও একটা সুর কেটে গেছে এই সময়টার ভেতরেই। এর মধ্যেই আব্বা হুট করে রুমে ঢুকে আমাকে টেনে বসার রুমে নিয়ে গেলেন আর বললেন -

"এই ছেলে যদি আপনারই হয় তাহলে এতদিন কি করেছেন? ওখানে কেন ছেড়ে এসেছিলেন ছেলেকে? এতই মায়া তাহলে তখন কেন মায়ায় কমতি পড়েছিল?"

হুট করে কথাগুলি শুনে কেমন যেন ঘোরে চলে গিয়েছিলাম। বাবা এরপরও কি যেন বলছিল খুব উত্তেজিত হয়ে। আবার সেই লোকটাও সমান তালে উত্তেজিত হয়েই কথার উত্তর দিচ্ছিল। কিন্তু কোন কথাই আমার কানে ঢুকছিল না। এক মুহূর্তেই পুরো দুনিয়াটা উল্টে গিয়েছিল আমার জন্যে।

এরপর ঐ ঘোর লাগা অবস্থাতেই ছুটেছিলাম, ঘর ছেড়ে বিল্ডিং থেকে নেমে রাস্তা ধরে ছুটছিলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে পড়ে যাবার ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ঐভাবেই ছুটছিলাম আমি। হোঁচট খাবার পরেই ঘোরটা কাটল। চারপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছিল বাবার কথাগুলি এরাও সবাই জেনে গেছে এরই মাঝে। রাস্তা থেকে দ্রুত উঠে ফুটপাতেই বসে পড়লাম। তখনও চরমভাবে হাঁপাচ্ছিলাম। বার বার আম্মার কথাগুলি কানে বাজছিল-
"এই লোক কিছু বললে বিশ্বাস করবি না একদম। এই লোকের কথায় কিছু আসে যায় না।"
কিন্তু ঐ লোক কিছু বলার আগে আমার বাবা এইসব কি বলল তাহলে? কেন বলল কথাগুলি?

চোখ ফেটে কান্না আসছে, কিন্তু আমি কান্নাও করতে পারছি না। কেমন যেন হাসফাস হচ্ছিল ভেতর ভেতর। বারবার মনে হচ্ছিল বাবা ঐসব মিথ্যা বলেছিল। এমন তো হতেই পারে না। আমার তো এখনো স্পষ্ট মনে আছে বাবা আমাকে কাঁধে করে নিয়ে হাঁটছে, ঘুমপাড়ানোর চেষ্টা করছে। তাহলে এমন কথা কেন বলবে বাবা। এটা হতেই পারে না। মনে হচ্ছিল আমি ভুল শুনেছি, বাবা অন্য কিছু বলেছিল। আমিই ভুলে কথাগুলি এমন শুনেছি।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। ফুটপাতে এত সময় বসে আছি দেখে কয়েকজন কেমন করে তাকাচ্ছেও। তার মধ্যে পড়ে গিয়ে হাঁটুর অনেক বড় অংশের চামড়া উঠে গেছে। একটু একটু রক্তও বের হচ্ছে সেখান থেকে সাথে জ্বালা করছে অনেক। কিন্তু মনের ভেতর যেই জ্বালা হচ্ছে তার কাছে এই জ্বালা কিছুই না। আমি শুধু বারার চাইছিলাম এই দুঃস্বপ্নটা ভেঙ্গে জেগে উঠি। উঠে দেখি আম্মা আমার জন্যে বিকেলের নাস্তা রেডি করছে। কিন্তু জাগতে আর পারছি কই। জ্বলে-পুড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছি আমি।

ফুটপাত ছেড়ে উঠে আবার হাটা শুরু করলাম। হাঁটছি, কোনদিকে খেয়াল করা ছাড়াই হাঁটছি। মাঝে মধ্যে এর ওর সাথে ধাক্কাও লাগছে। দুই একজন আবার "পাগল নাকি" বলেও সম্বোধন করছে। কিছুই গায়ে লাগছে না এখন আর। ঘোর লাগা মুহূর্তটা আবার ফিরতে শুরু করেছে মনে হয়। সত্যিকারের একটা পরিচয় ছাড়াই আমি মিথ্যা পরিচয়ে এতটা বড় হয়ে গেছি, সেটাই ভাবছি বার বার। হাটতে হাটতে কখন এই কলোনির সামনে ল্যাম্প-পোষ্টের নিচে চলে এসেছি তা খেয়াল করি নি। খেয়াল হল যখন অন্ধকারটাকেই আপন মনে হচ্ছিল তখন।

আচ্ছা ঘুরে ফিরে এখানেই কেন ফিরে এলাম? এখানে তো আপন বলে কেউ নেই, সবই তো আমার অপরিচিত। সবকিছুই তো মিথ্যে......






Read More »
Tuesday, August 19, 2014

এক হৃদয় কারিগরের গল্প...




 





















────────────────────────────
♦ কমিক : হৃদয়কারিগর | Heartsmith
♦ সংগ্রহ : OtakuMame.com
♦ জঘন্য অনুবাদে : আমি :p

Read More »
Saturday, August 16, 2014

হাত বাড়াবে কি, অহনা...





অহনা,
প্রভাতের আলোয় শুভ্র বাতাসের চাদর গায়ে গলিয়ে তোমাকে লিখতে বসলাম। আজ প্রভাতের স্নিগ্ধতা বার বার তোমার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বার বার বলছে একবার আলিঙ্গনে কাছে থেকে আরও কাছে নিয়ে আসতে তোমায়। কিন্তু নিরুপায় আমি, তাই তোমাকে অন্তরের কাছে রাখা ব্যতীত আর কিছুই করতে পারছি না। আচ্ছা, তোমারও কি কখনো ইচ্ছে জাগে না এভাবেই পাশাপাশি বসে একটা ভোরের আলো গায়ে মেখে নিতে?

গতরাতের ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি আজ ভোরে বিদায় নিয়েছে। রেখে গেছে ঠাণ্ডা বাতাসের পরশ। আমি জানি এই সময়টা তোমার খুব প্রিয়। তুমি প্রায়ই এই সময়টাতে তোমাদের বারান্দায় দাড়িয়ে গুন গুন গান গাও, আর তোমার ছোট ছোট ফুল-ফোটা গাছ গুলিকে যত্ন কর। এটা কিভাবে জানলাম? তোমার কর্মব্যস্ত আনন্দিত মুখটা দেখার জন্যে আমি অনেকগুলি ভোর তোমাদের বাড়ির সামনেই অপেক্ষায় কাটিয়েছি। আর সত্যি বলতে কি, আমার কোন অপেক্ষাই বৃথা যায় নি। তুমি প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার কিছু সময় পরই চলে আসতে তোমার সেই ফুলের গাছগুলির কাছে। আর আমি দূর থেকেই তোমার আনন্দিত মুখখানি দেখতে থাকতাম। জানি, এটা জানার পর তুমি আমাকে বেহায়া আর কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবতে শুরু করেছো। কিন্তু তোমার ঐটুকু আনন্দ উপভোগের জন্যে কাণ্ডজ্ঞানহীন বেহায়া উপাধিটাও আমার কাছে কম মনে হয়।

দুটি পরিপূর্ণ মন যারা একে অপরের জন্যে অস্থির হয়ে থাকে, তাদের মনের ভেতরে জমানো অব্যক্ত কথার মালা আর একটুখানি দেখা করার, একটু সময় কাছে থাকার যে ব্যাকুলতা তাদের ভেতরে চলতে থাকে, একেই কি ভালোবাসা বলবে না তুমি? আমি ঠিক জানি না তোমার মধ্যেও এমন ব্যাকুলতা কাজ করে কি না। তবে জানি, তুমি অগোছালো হয়ে যাও। যখন এক দৃষ্টিতে তোমার দিকে তাকিয়ে তোমাকে বুঝতে চেষ্টা করি, তখন তুমি নিজেকে লুকানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়। কিন্তু বিশ্বাস কর, তোমাকে বুঝে নেবার জন্যে মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরন কণা তখন ব্যস্ত থাকে। তোমাকে তোমার মত উপলব্ধি করতে প্রতিটা আবেগ বার বার নিজেদের পরিবর্তন করে নেয়। কিন্তু তবুও তুমি নিজের ভেতর থেকে বারংবার নিজেকেই লুকাও।

এভাবে আর নয় অহনা, আমি তোমার সম্পূর্ণটা জানতে চাই। এভাবে লুকিয়ে ফিরিয়ে নয়, তুমি যেভাবে ভাবো, যেভাবে চিন্তা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ কর, যেভাবে তোমার নিজেকে মুক্ত মনে হয় ঠিক ঐভাবেই আমি তোমাকে চিনতে চাই। জানতে চাই ঐ আপন কর্মব্যস্ততায় হাস্যোজ্জল মেয়েটাকে যে তার ছোট টবে ফোটা ফুলগুলির সামনে গেলে খুকি মেয়েদের মত মুখে হাসি ধরে রাখতে পারে। জানতে চাই ঐ বালিকাকে যে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অজানা কোন কারণে কান্না করতে থাকে। আমি জানতে চাই তোমাকে, যে প্রতিটা প্রহরে নিজের মনের আকাশে পাখি হয়ে উড়ে।

জানি না অহনা, কোনদিন এতটা অধিকার তুমি দেবে কি না। তবুও বলি, দুর্গম কোন পথেও যদি তুমি একবার হাত বাড়িয়ে ইশারা কর তোমার পথের সঙ্গী হতে। আমি সেখানেও তোমার সঙ্গী হয়ে তোমার পাশেই হাঁটবো। তোমার একলা পথের একমাত্র সঙ্গী হবো। কিন্তু তুমি ইশারা করে একবার ডাকবে তো ??


ইতি
কাণ্ডজ্ঞানহীন বেহায়া যুবক






Read More »
Thursday, August 14, 2014

দিনের শুরুর ব্যস্ততার গল্পের খোঁজে.....




রাত্রিটা স্বস্তি আর অস্থিরতা পার করে দ্রুত পায়ে ভোরের দিকে ছুটে চলে, সাথে আমার হেটে চলা পথটাও অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ধাবিত হয়। একটা দিনের শুরুর আলোকিত হবার প্রক্রিয়াটাও বেশ জটিল। হুট করেই আলো চলে আসে না কিংবা খুব ধীরেও আসতে পারে না। মনে হয় কিছু সময় পরপর আকাশের কালো পর্দাটা আস্তে আস্তে কেউ শুভ্র একটা পর্দা দিয়ে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আর প্রতিবারই এই অন্ধকারটা একটু একটু করে কমে যাচ্ছে তাতে।

রাতের অন্ধকারে বড় বড় এই দালানগুলো যে আকাশ চুরি করে রেখেছে তা এতটা বোঝা যায় না যতটা দিনের আলো ফোটার পর বোঝা যায়। আমি এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের আকাশ দেখবো তর জো নেই। ডানে-বামে, সামনে-পেছনে সব জায়গাতেই এই দালানের উঁচু মাথার অবস্থান। তারপরও ভালো যে একেবারে আকাশটাকে ঢেকে দিতে পারে নি। তাদের উঁচু উঁচু মাথার ফাকা দিয়েই কিছুটা আকাশের এখনো দেখা মেলে। ঐ দিক দিয়েই আমি আকাশটুকু মুগ্ধতার সাথে দেখতে থাকি।

রাতটা যেমন সবাই ঘুমিয়ে কাটাতে পারে না, তেমনি দিনের শুরুতে সবাই আলসেমিও করতে পারে। এই শহরে আলসেমি আভিজাত্যের একটা লক্ষণ। ব্যস্ত ভঙ্গীতে কেউ কেউ দোকানপাট খুলতে থাকে, কেউ আবার তাদের পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে চলে। এদের কারো চোখে ঘুমের তৃপ্তি দেখতে পাই না আমি। সবাই যেন এক একটা রোবট। কোন এক অদৃষ্ট থেকে কেউ তাদের সুইচ চালু করে দিয়েছে আর তারা সেই নির্দেশ পেয়ে ছোটা শুরু করেছে। কারো কোন পরোয়া নেই, কোন কিছুতেই নেই।

দেখতে দেখতে নীরব শহরটা কোলাহল পূর্ণ হতে থাকে। রিক্সার টুংটাং আর গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। আমি এই ব্যস্ততার এক কোনায় অবস্থান নিতে চায়ের এক দোকানের পেতে রাখা টুলে বসি। তখনো দোকানির চা'য়ের পানি ফোটানো সম্পূর্ণ হয়নি। আমি বসে বসে তার গোছগাছ দেখতে থাকি। অল্প একটুখানি জায়গা। আর তাতেই দুনিয়াশুদ্ধ জিনিষ পত্রে বোঝাই। দোকানি এর মাঝেই তার ক্ষেত্র তৈরি করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন দ্রুত গতিতে।

গতরাতে দ্রুত দ্রুত বাসা বাড়িতে ফিরে যাবার জন্যে যেই লোক গুলিকে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখেছি আজকে আবারও তাদের দৌড়ঝাঁপ দেখছি। না, এখন বাসার উদ্দেশ্যে নয়। বরং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কে কত দ্রুত পৌছতে পারবে সে নিয়ে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে তাদের মাঝে। কোন একটা যাত্রী বোঝাই বাহন থামা মাত্রই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তারা। ভিন্ন গন্তব্যের ভিন্ন ভিন্ন বাহন কিন্তু তাদের লক্ষ্য করে এই দৌড় ঝাপের কোন ভিন্নতা দেখা যায় না। বরং যেন সিডি প্লেয়ারের রিপ্লে বাটন বার বার ক্লিক করে এখানে টেনে ধরছে এমন মনে হচ্ছে। এভাবেই চলতে থাকে তাদের।

পাশ দিয়ে গতকালের নাম না জানা সেই রিকশাওয়ালা রিকশা চালিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি ভেবে পাই না এদের এত মানুষিক শক্তির যোগানটা আসে কোথা থেকে। দিনভর শারীরিক এই পরিশ্রম করার পর কিভাবে এই ভোর পেরুতে না পেরুতেই এরা আবার ছুটে আসে। সত্যিই ঐ ছোট্ট চালার ঘরে কি এতটা শক্তি লুকানো আছে যে এই দুই চার ঘণ্টার বিশ্রাম এদের আবার নতুন উদ্যমে দিনভর ছুটিয়ে নিয়ে চলে? ইচ্ছে হয় ঐ চালাঘরে গিয়ে একটা রাত কাটিয়ে আসার। এদের এই উদ্যমের লুকানো শক্তিটা নিজ চোখে দেখে আসার। তার সাথে যদি কিছুটা শক্তি নিয়ে আসা যায় তাতেই বা মন্দ কি।

যেখানে বসেছি তার পাশেই এক হকার মাটিতে একটা পর্দায় পত্রিকা বিছানো শুরু করেছে। দিনের শুরুতেই গরম গরম খবরগুলিকে নির্বিকার ভঙ্গিতে গুছিয়ে নিচ্ছে সে। সবাই যে আগ্রহ নিয়ে পত্রিকার পাতায় ছাপা খবর গুলি পড়ে এর ছিটেফোঁটা আগ্রহ ও এই লোকটার মাঝে নেই। গোছানো শেষ হবার থেকেই একটু পরপর হাঁক ছাড়ছে সে "এই পেপার! পেপার!" বলে।

চা'য়ের দোকানি চা তৈরি করে ডাকছে "মামা চা নেন"। এবার এই লোকটার ভেতরে একটু উৎফুল্ল ভাব দেখতে পাই। দিনের শুরুতেই কাজ গুলি গুছিয়ে নিয়ে অনেকটাই আনন্দ কাজ করছে তার। কিন্তু কে জানে এই আনন্দ কতক্ষণ ধরে রাখতে পারবে সে? কে জানে কেউ ১ টা টাকার জন্যে এর সব আনন্দ নষ্ট করে দিবে না? 

দ্রুত দ্রুত গরম চা'য়ের কাপে চুমুক লাগিয়ে কাপটা খালি করে দাম মিটিয়ে বেরিয়ে আসি দোকান থেকে। এবার আমার ক্লান্তি দূর করার পালা। রাতের স্নিগ্ধতা থেকে শুরু করে দিনের শুরুর ব্যস্ততা পর্যন্ত দেখতে দেখতে এখন অনেকটা ক্লান্ত বোধ করছি। আমিও এখন ছুট লাগালাম আমার সেই মাথা গোজার ঠাঁইয়ের দিকে......





Read More »
Sunday, August 10, 2014

Gmail এ Alias ও Filter তৈরি এবং তার ব্যবহার





Google আমাদের যে কয়েকটি সার্ভিস দিয়ে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা সার্ভিস হচ্ছে Gmail যা শুরুতে Google Mail নামে পরিচিত ছিল। সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্যে এটা উন্মুক্ত এবং বিনামূল্যের একটি সার্ভিস। আর আমাদের মত অধিকাংশ ব্যবহারকারী একে Primary Mail হিসেবেই ব্যবহার করে। কিন্তু মাঝে মাঝে বিশেষ প্রয়োজনে Alias মেইলের প্রয়োজন দেখা দেয়।

আচ্ছা যদি এই একই মেইল এড্রেস ব্যবহার করে নতুন আরেকটা মেইল এড্রেসের সুবিধা নেয়া যায় তাহলে কেমন হয়?

হ্যাঁ, Gmail ও অন্যদের মত Alias মেইলের সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে একটু বিপত্তি হচ্ছে, তারা একেবারে নতুন নামে মেইল এড্রেস তৈরি করতে দেয় না। বরং আপনার মেইল এড্রেসটিতে কিছু অতিরিক্ত অক্ষর ব্যবহার করে Alias মেইল তৈরির সুবিধা দেয়।

ধরুন আমার বর্তমান মেইল এড্রেসটি হচ্ছে "contactkosor@gmail.com"। এখন এর যদি আমি Alias তৈরি করে চাই তাহলে আমাকে এর সাথে বিশেষ শব্দ বা অক্ষর যুক্ত করে alias তৈরি করতে হবে। আমি যদি এর সাথে "blogs" লেখাটা যুক্ত করে alias তৈরি করতে চাই তাহলে আমার নতুন মেইল এড্রেসটি হবে "contactkosor+blogs@gmail.com" এবং এটিই আমার Gmail এর নতুন alias মেইল।



Gmail এর Alias তৈরির পদ্ধতি :

ধাপ ১ : আপনার Google Mail একাউন্টটিতে Log in করুন। সম্পূর্ণ লোড হয়ে যাবার পর গিয়ার আইকনে ক্লিক করে মেনু থেকে Settings সিলেক্ট করুন।




ধাপ ২ : Setting পেইজ আসার পর উপরের দিকে Accounts and Imports ট্যাব দেখতে পাবেন। এটাতে ক্লিক করুন।



ধাপ ৩ : Accounts and Imports এর ভেতরে "Send mail as:" অংশে আপনার বর্তমান মেইল এড্রেসটি দেখতে পারবেন। এর নিচেই রয়েছে "Add another email address you own" লিংকটাতে ক্লিক করুন। একটা নতুন window আসবে পর্দায়।



ধাপ ৪ : নতুন Window টিতে দুটি বক্স রয়েছে। এর প্রথমটিতে আপনি আপনার Alias মেইলে যেই নাম দিতে চান সেটি লিখে দিন। যেমন আমার মূল মেইলের বিপরীতে নাম ছিল “কিশোর মাহমুদ” আর নতুন Alias মেইলে আমি নামটিকে দিতে চাই “কিশোর ব্লগার”। তাই আমি এখন Name লেখা বক্সে “কিশোর ব্লগার” লিখে দিবো। এরপর রয়েছে Email address নামের আরও একটা বক্স। এটাতে আপনি প্রথমে আপনার মেইল এড্রেসটি লিখুন। এখন “@gmail.com” এর পূর্বে একটি যোগ চিহ্ন ( + ) দিন। এখন আপনার Alias নামটি লিখুন। যেমন আমি আমার alias নাম হিসেবে ব্যবহার করবো “blogs”। আর তাতে আমার নতুন মেইল alias টি হবে “contactkosor+blogs@gmail.com”। এরপর Next Step বাটনে ক্লিক করুন।


পেইজ রিলোড হলেই দেখতে পারবেন আপনার বর্তমান মেইলটার নিচেই নতুন এড্রেসটি যুক্ত হয়ে গেছে।




এবার চলুন Alias মেইলটি ব্যবহার করে দেখি....

মেইল বক্সে ঢুকে Compose বাটনে ক্লিক করুন। এরপর নতুন মেইল ইডিটরে From এর বক্সে একটা ড্রপ ডাউনের তীর দেখতে পাবেন। সেটাতে ক্লিক করলেই আপনার বর্তমান মেইল সহ Alias মেইল গুলি লিস্ট আকারে দেখাবে। যে কোন একটা Alias মেইল সিলেক্ট করুন। এরপর যার কাছে মেইল পাঠাবেন তার এড্রেস, মেইলের বিষয়বস্তু, আর মেইলটি লিখে Send বাটনে ক্লিক করুন।


এরপর যাকে পাঠালেন তার ইন বক্সে আপনার alias মেইলটিকে মেইলিং এড্রেস হিসেবে দেখতে পাবে।



Mail Filter তৈরি করার পদ্ধতি: 

  • মেইল বক্স থেকে মেইল সেটিংসে ঢুকুন। এরপর Filters ট্যাবে ক্লিক করুন। পূর্বে থেকেই যদি কোন ফিল্টার তৈরি করা থাকে সেটা আপনি এখানেই দেখতে পারবেন। আর না থাকলে চিত্রের মত শূন্য দেখাবে।

  • এখন নতুন Filter তৈরি করার জন্যে " Create a new filter " বাটনটিতে ক্লিক করুন। একটা নতুন ফর্ম আসবে। এর From এর ঘরে আপনার নতুন তৈরি করা Alias মেইলটি লিখুন। এরপর "Create filter with this search" লেখাটিতে ক্লিক করুন।


এখানে Apply the label এর চেক বক্সে ক্লিক করে লিস্ট থেকে "New label...." সিলেক্ট করুন। 


  • নতুন ফর্মের প্রথম বক্সটিতে যে নামে লেভেল দিতে চান সেই নামটি লিখুন। যেমন আমি দিয়েছি "Blogs", এরপর Create বাটনে ক্লিক করুন।


  • পূর্বের ফর্মের "Never send it to Spam" এবং "Also apply filter to matching conversation" লেখার চেক বক্স গুলি সিলেক্ট করুন। তারপর Create filter বাটনে ক্লিক করুন।



ফিল্টার লিস্টে আপনার তৈরিকৃত ফিল্টারটি দেখতে পাবেন। আর সাইডে আপনার দেয়া নামে একটি লেভেলও দেখা যাবে।



এখন লেভেলটিতে ক্লিক করলেই আপনার alias মেইলে যতগুলি মেইল এসেছে তা আলাদা ভাবে দেখতে পারবেন। একের অধিক Alias মেইল থাকলে ফিল্টার তৈরি করে ব্যবহার করলে খুব সহজেই মেইল গুলি আলাদা ভাবে দেখা যায় এই পদ্ধতিতে।




নিজে চেষ্টা করে দেখুন। কোন সমস্যা হলে অবশ্যই জানাবেন, যথাসম্ভব দ্রুত রিপ্লাই দেবার চেষ্টা করবো।

সময় নিয়ে পোষ্টটি পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।















Read More »
 
;