গত পরশু চমৎকার একটা মুভি দেখলাম। মুভি যা ইতিহাস এবং গল্প একত্রিত করেছে। মুভিটির নাম Emperor যা ২০১২'র ২৭ জুলাই মুক্তি পায়।
মুভিটির শুরু জাপান আত্মসমর্পণের অংশ থেকে। যেখানে জেনারেল ডাগলাস ম্যাকআর্থার কে তার সহযোগীদের সাথে পাঠানো হয় জাপানে। তারা জাপান আসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে নেতৃত্ব দিয়ে নতুন ভাবে এগিয়ে নিতে আর যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির আলতায় নিয়ে আসতে। আসা মাত্রই জেনারেল বার্নার ফেলাস তৎপর হয়ে উঠে, যাতে কোন যুদ্ধাপরাধী পালাতে কিংবা আত্মহত্যা করতে না পারে। অল্প সময়ের মাঝেই প্রায় সবাইকে তারা ধরে নিতে সক্ষম হয়, তবুও এর মাঝে কয়েকজন আত্মহত্যা করে বসে। বাকি কিছু আমেরিকানরা দেশে এসেছে জেনেই গা'ঢাকা দেয়।
মুভিটির শুরু জাপান আত্মসমর্পণের অংশ থেকে। যেখানে জেনারেল ডাগলাস ম্যাকআর্থার কে তার সহযোগীদের সাথে পাঠানো হয় জাপানে। তারা জাপান আসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে নেতৃত্ব দিয়ে নতুন ভাবে এগিয়ে নিতে আর যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির আলতায় নিয়ে আসতে। আসা মাত্রই জেনারেল বার্নার ফেলাস তৎপর হয়ে উঠে, যাতে কোন যুদ্ধাপরাধী পালাতে কিংবা আত্মহত্যা করতে না পারে। অল্প সময়ের মাঝেই প্রায় সবাইকে তারা ধরে নিতে সক্ষম হয়, তবুও এর মাঝে কয়েকজন আত্মহত্যা করে বসে। বাকি কিছু আমেরিকানরা দেশে এসেছে জেনেই গা'ঢাকা দেয়।
অন্যদিকে জেনারেল বার্নার ফেলাস, যে তার থিসিস করেছিল এই জাপানী সংস্কৃতি এবং রাজনীতি নিয়ে। তার থিসিস করার সময়ে পরিচয় হয় আয়া নামের এক জাপানি বালিকার সাথে। প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনের ভালোলাগায় পরিণত হয়। কিন্তু পারিবারিক কারণে আয়া ফিরে যায় তার দেশে। পরবর্তীতে বার্নার তার থিসিসের উদ্দেশ্যে জাপান আসলেও, আয়ার সাথে দেখা করাই তার মূল উদ্দেশ্য থাকে।
কিন্তু এর মাঝেই অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে যায়। জাপান সরকার তখনই জনসাধারণের মনে আমেরিকানদের শত্রু হিসেবে পরিচিতি দিতে প্রচারণা চালাতে থাকে। বিভিন্ন স্তর আর বয়সের মানুষে আমেরিকানদের উপর যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়েই বিদ্বেষ আর আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ পায়।
এদিকে যুদ্ধপরবর্তী জাপানের অবস্থা তখন বেশ ভয়াবহ। বিস্ফোরণের আঘাতে মানুষ আর তাদের জীবন একেবারেই মানবেতর পর্যায়ে। ভেতর ভেতর ক্রোধ থাকলেও সেটা প্রকাশ করতে পারে না। আবার অন্যের সিদ্ধান্তে বেঁচে থাকা সেটাও মেনে নিতে পারে না মন থেকে। ঘৃণা আর আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ সর্বস্তরে, যদিও সেটা তখন নিজেদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ।
কিন্তু এইসব ছাপিয়েও জেনারেল বার্নারের মনে জাপানের মানুষদের জন্যে একটু দুর্বলতা রয়েছে। আর এই দুর্বলতার বড় একটা অংশ আয়া। থিসিস করার সময় আয়ার সহযোগিতায় সে জাপানীদের অতীত সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অনেক কিছুই বিস্তর ভাবে জানতে পেরেছিল। আয়া'র এক চাচা জেনারেল হবার সুবাদে তার থেকে রাজনৈতিক অনেক ব্যাপার জানতে পেরেছিল বার্নার। একই সাথে জাপানের ঐতিহ্য আর একে এগিয়ে নিয়ে যাবার কৌশল কিছুটা আয়ত্ত করতে পেরেছিল সে ঐ সময়।
যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নিজের কাজের পাশাপাশি বার্নার আয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। এখানে আসার পর তার জন্যে একজন জাপানী ড্রাইভার, পথ নির্দেশক এবং দোভাষী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল বার্নার আয়াকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তার সেই ড্রাইভার তাকাহাসিকে প্রদান করে। তাকাহাসিও দায়িত্বের সাথে আয়ার খোঁজ করতে শুরু করে। কিন্তু প্রতিবারই তাকে হতাশ হতে হয়। প্রতিবারই আয়াকে খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পায় বোমা হামলায় নিশ্চিহ্ন এলাকার অবস্থান।
অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের তথ্য যাদের কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তারা সবাই এইসব তথ্য দিতে নারাজ। আমেরিকানদের সরাসরি সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। কিন্তু তাতে দমে যায় না জেনারেল বার্নার। আসলে সে নিজেও জানত জাপানী নেতাদের সম্মানেই জাপানের কোন সাধারণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে উচ্চ মর্যাদার কেউ এগিয়ে আসবে তাদের কাজে অগ্রগতি আনতে। তাই সে ভিন্ন পথে এগুতে থাকে, বেছে নেয় বন্দী যুদ্ধাপরাধীদের। সেই ধারাবাহিকতায় গভর্নর থেকে একজন যুদ্ধাপরাধী কানয়ী'র নাম জানতে পারে।
জেনারেল দেখা করে কানয়ীর সাথে। জেনারেল খুব জোর দিয়ে জানতে আগ্রহী হয় সম্রাট হিরোহিথো কি সরাসরি পার্ল হারবার এর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না সেই সম্বন্ধে। কিন্তু কানায়ী জানায় ঐ সময়টা ছিল বেশ গোলযোগপূর্ণ, সম্রাট নিজেও বেশ গোলমেলে ছিলেন এই নিয়ে। গভর্নর বিভিন্ন ভাবে উপদেশ আর নির্দেশ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তাই সম্রাটের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক নির্দেশনাই গভর্নর দিতে পেরেছিলেন ঐ সময়। প্রকৃত সম্রাট কি চাইতেন তা তার ধারণার বাইরে।
বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে জেনারেল বার্নার জেনারেল ডাগলাস এর সাথে সম্রাট হিরোহিথোর সাক্ষাত করার ব্যবস্থা করে। এর মাঝে বেশ চমকপ্রদ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য পেতে থাকে জেনারেল বার্নার। একই সাথে নিজের বুদ্ধিমত্তা আর জাপানিদের সংস্কৃতির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সমানভাবে নিজের কাজ এবং জাপানের স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করে এগিয়ে যায় সে।
মুভিটিতে জেনারেল বার্নারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Matthew Fox আর জেনারেল ডাগলাস এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Tommy Lee Jones। পরিচালক পিটার ওয়েবার চমৎকার ভাবে ইতিহাসের সাথে জেনারেল বার্নারের ভালবাসাকে তুলে ধরেছেন। মুভিটা যতটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত অনুভূতি দেবে তার চেয়েও বেশি পরিমাণে জেনারেল বার্নার আর আয়ার ভালোবাসাকে বর্ণনা করবে। বার্নারের এই ভালোবাসার কারণেই জাপানের সম্রাট হিরোহিথোর সম্মান রক্ষা করে পুরো ব্যাপারটাকে একটা চমৎকার সমাপ্তিতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল।
যারা ইতোমধ্যে মুভিটি দেখেছেন তারা অবশ্যই উপভোগ করেছেন বলে আশা করি। আর যারা এখনো দেখেন নি তারা সময় নিয়ে দেখতে পারেন। আশা করি মুভি দেখার পর সময়টা নষ্ট করেছেন বলে মনে হবে না।
মুভির ট্রেইলার :
- !?! -