মাদাম তুসোর এক মূর্তি নির্মাতা কর্মীর সাথে কথা হচ্ছিল এক চাইনিজ ইঞ্জিনিয়ারের।
তুসোর কর্মীঃ এসো আমাদের যাদুঘরে, বিশ্বের সকল জনপ্রিয় মুখ গুলির সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেব।
চৈনিক ইঞ্জিনিয়ারঃ সেখানে আর এমন কি দেখার আছে? কতগুলি মানুষের আকৃতিকে তোমরা মমের উপর গড়েছ। কৃতিত্ব দেখানোর মত তো সেখানে কিছুই নেই!
তুসোর কর্মীঃ আচ্ছা! তাই বুঝি! তা তোমরা কি 'হেন' করেছ শুনি?
চৈনিক ইঞ্জিনিয়ারঃ তার আগে বল 'হেন' কি নেই যেখানে চৈনিক ছোঁয়া নেই। মমের গঠন এবং গলন নিয়ন্ত্রণে যে মেশিন গুলো তোমরা ব্যবহার কর সেটাও তো তোমরা আমাদের কাছ থেকেই নাও।
তুসোর কর্মীঃ তোমাদের দৌড় তো ঐ পর্যন্তই। নকল করে বেড়াও
অন্যজনকে।
চৈনিক ইঞ্জিনিয়ারঃ আর তোমরা বুঝি খুব আসল তৈরি করতে জানো? যাও যাও! তোমার মত অনেক দেখা আছে আমাদের।
তুসোর কর্মীঃ দেখো! বেশি বাড় বেড়ো না। শেষে তোমার একটা মূর্তি গড়ে সেটার সামনে 'চাইনিজ কপিবাজ' লিখে বোর্ড ঝুলিয়ে দেব।
চৈনিক ইঞ্জিনিয়ারঃ তা করতে পারো। সেক্ষেত্রে তোমার ঐ মাদাম তুসোর যাদুঘরটার আদলে আমরা একটা যাদুঘর গড়ে নেব। তুমি যেখানে আমার মূর্তিটাকে স্থাপন করবে, আমরা সেখানে ঐ মূর্তিটার বদলে তোমার একটা মূর্তিকে বসিয়ে তার সামনে রাখা বোর্ডে লিখব 'ভিয়েনার চোর'।
(অপমান সহ্য করতে না পেরে ক্ষেপে যায় তুসোর মম-মূর্তি নির্মাতা)
তুসোর কর্মীঃ তবে রে!
পাশে তাদের এই তর্ক দেখছিল বাঙ্গালি এক ভদ্রলোক। তর্কের এই পর্যায়ে এসে সে হাল ধরল।
বাঙ্গালি ভদ্রলোকঃ এই! কি করে! কি করে!
তুসোর কর্মীঃ ছাড়ুন! ছাড়ুন আমাকে। এই চাইনিজ চোরটার একটা বিহিত আজ করেই ছাড়ব।
বাঙ্গালি ভদ্রলোকঃ আরে থামুন! রেগে গেলে তো তর্কে জেতা যায় না। তর্কে জিততে হলে শান্তির প্রয়োজন।
(কথা শুনে একটু ধাতস্থ হয়ে বসল মম-মূর্তি নির্মাতা)
তুসোর কর্মীঃ আচ্ছা, শান্ত হলাম। কিন্তু আমরাই যে সেরা সে কথা ওকে মেনে নিতেই হবে।
চৈনিক ইঞ্জিনিয়ারঃ হা! হা! হাহাহা! তুমি বললেই তো আর হচ্ছে না বাছা। দুনিয়াকেও তো সেই কথার স্বীকৃতি দিতে হবে।
বাঙ্গালি ভদ্রলোকঃ আচ্ছা দাঁড়ান। আমি একটা সমাধানের চেষ্টা করে দেখি। তুসো সাহেব, আপনি বলছেন আপনি যে কোন ব্যক্তির রূপ আপনার মমের মাঝে নিয়ে আসতে পারবেন। আর ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, আপনি বলছেন আপনারা যে কোন কিছু তার আদলে গড়তে জানেন।
তুসোর মম-মূর্তি নির্মাতা এবং চৈনিক ইঞ্জিনিয়ার একত্রেঃ হুম।
বাঙ্গালি ভদ্রলোকঃ আপনাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হবে যদি আপনারা আমার বলা কাজ নিজেরা করে দেখাতে পারেন।
তুসোর মম-মূর্তি নির্মাতা এবং চৈনিক ইঞ্জিনিয়ার একত্রেঃ বলুন! আমরা অবশ্যই তা করতে পারব।
দুজনের এই কথা শুনে বাঙ্গালি ভদ্রলোক বললেন-
ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, আপনাদের প্রযুক্তি দিয়ে আপনি বঙ্গদেশের যে কোন নেতাকে হুবহু কপি করে দেখান।
আর তুসো সাহেব, আপনি বঙ্গদেশের সরকার দলীয় এবং বিরোধীদলীয় দুই নেতার মমের মূর্তি একত্রে এক স্থানে তৈরি করে দেখান।
বাঙ্গালি ভদ্রলোকের কথা শুনে চৈনিক ইঞ্জিনিয়ার এবং মম-মূর্তি নির্মাতা উভয়ে কিছুক্ষণ ভাবল।
বেশ খানিকটা সময় ভাবার পর-
তুসোর কর্মীঃ ইঞ্জিনিয়ার ভাই, আপনিই সেরা। আমি জানি আপনিই পারবেন বাঙ্গালি ভদ্রলোকের দেয়া ঐ শর্ত পূরণ করতে।
চৈনিক ইঞ্জিনিয়ারঃ না ভাই! সেটা বড়ই কঠিন কাজ। এত করাপশন সহ একটা মগজ কপি করার মত এই অসম্ভব কাজ করে দেখানোর প্রযুক্তি এখনো আমাদের হয়নি। তার বদলে যদি আমেরিকান প্রেসিডেন্টকেও কপি করে দেখাতে বলত তা আমরা চোখ বুজেই করে ফেলতে পারতাম। বরং আমার মনে হচ্ছে আপনাদের কাজই বিশ্বসেরা। দুনিয়ার কত শত নামী দামী মানুষ আপনাদের যাদুঘরে রয়েছে। আমার বিশ্বাস আপনিই পারবেন বাঙ্গালি বাবুর শর্ত পূরণ করতে।
তুসোর কর্মীঃ না ইঞ্জিনিয়ার ভাই। এটাও এক অসম্ভব ব্যাপার। দুনিয়ার যে কোন ব্যক্তিকে আপনি বলেন, আমরা তার মমের মূর্তি গড়ে দেব। কিন্তু ঐ দুজনের মূর্তি, তাও আবার এক সাথে একই স্থানে। স্রেফ অসম্ভব একটা কাজ ভাই ওটা। মম বসানোর আগেই তারা দুদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকবে।
এর পরের ঘটনা, সে আরেক ইতিহাস...... 😷 😷